Advertisement
Advertisement
Democracy of India

ভারতে গণতন্ত্র, সরষেয় ভূত?

ভোটপ্রক্রিয়াকে অবাধ ও নিষ্কলুষ রাখাই অন্যতম শর্ত।

Editorial on democracy of India?
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:August 16, 2025 9:48 pm
  • Updated:August 16, 2025 9:49 pm  

ভারতের গণতন্ত্র কায়েম রাখার অন্যতম শর্ত ভোটপ্রক্রিয়াকে অবাধ ও নিষ্কলুষ রাখা, যাতে পিছুটানহীন সরকার পেতে পারে দেশ। হয় কি?

Advertisement

শিবরাম চক্রবর্তীর ‘দেবতার জন্ম’ গল্পে আমরা দেখি, পথে যেতে-আসতে একটি পাথরের– আসলে, বড় গোছের নুড়ি– সঙ্গে হেঁাচট লাগত বলে নায়ক একদিন সকালে কোদাল নিয়ে নেমে পড়ে পাথরটিকে উৎখাত করার জন্য। ভিড় জমে যায় অল্পস্বল্প। নায়ক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নুড়িটিকে সমূলে ভূমিচ্যুত করতে পেরে যখন আত্মতুষ্ট, তখন নীরব জনতার ভিতরে থেকে একজন জিজ্ঞেস করে বসে– ‘খুঁ়়ড়ছিলেন কেন? কোনো স্বপ্নটপ্ন পেয়েছেন?’ নায়ক অবাক হয়, এমনও প্রশ্ন হতে পারে বুঝি! তারপর সরাসরি বলে দেয়– পাইনি। যা ভাবছেন তা নয়। কিন্তু সেই ব্যক্তির প্রত্যয় হয় না। ঘুরেফিরে জানতে চায়: সত্যি বুঝি পাননি কোনও প্রত্যাদেশ? এভাবে চলছিল।

কয়েক দিন পরে নায়ক অনুভব করে– পাথরটার সর্বাঙ্গে কে যেন ভাল করে তেলসিঁদুর লেপে দিয়ে গিয়েছে। এর কয়েক মাস বাদে সেই নুড়িটি চেহারা পেল ত্রিলোকেশ্বর শিবের। মন্দির তৈরি হল তাকে ঘিরে। দেখা গেল, সেই অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তি কালক্রমে নিযুক্তি পেয়েছেন সেবায়েতের। চারিদিকে রটে গিয়েছে– এই পাথর অসীম জাগ্রত। এই পাথর স্বয়ম্ভু। এর তল নেই, মাটি ফুঁড়ে উঠেছে। জনবিশ্বাসের এমন নবতরঙ্গ দেখে নায়ক অবাক হয়ে যায়।

সত্য থেকে মিথ্যার দিকে অভিযাত্রার এ এক ঐতিহাসিক দলিল যেন। যা ছিল বাস্তবের অংশ, তা কী করে বাস্তবতা পরিহার করে, দৈব-পরিচালিত অমোঘ বিশ্বাসে পরিণত হয়, ‘দেবতার জন্ম’ গল্পে শিবরাম চক্রবর্তী তা-ই দেখিয়েছেন। দেখিয়েছেন, যার স্বার্থ রয়েছে, সে কেমন করে সত্যের কাঠামোকে বিচলিত করতে পারে, ভেঙেচুরে বানাতে পারে নতুন ন্যারেটিভ। ‘ফেক’ বা ‘ভুয়া’ বলে এখন যার প্রচলন সবচেয়ে বেশি আগ্রাসী ও বিপজ্জনক তা হল– ভুল তথ্যের বেসাতি। কিন্তু ভুল তথ্যের জন্মও একইভাবে ঘটে, যেভাবে বাস্তবের একটি নুড়ি আস্তে আস্তে পরিগ্রহ করে দেবতার কায়া।

সম্প্রতি জাতীয় রাজনীতি উত্তাল ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ বা ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (‘স্যর’) ঘিরে। কেন্দ্রের শাসক দলের যুক্তি, এতে নাকি ‘সাফাই’ সম্পন্ন হবে। অন্যদিকে, বিরোধী পক্ষের বক্তব্য, এতে গণতন্ত্র বিপন্ন। বিহার ভোটের আগে যে-‘স্যর’ হয়েছে, তাতে ৫৬ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে! ‘সরষের মধ্যে ভূত’ প্রবাদটি সিস্টেম বা গঠনতন্ত্রের ভিতরে লুকিয়ে থাকা আত্মঘাতী প্রবণতাকে নির্দিষ্ট করতে চায়।

ভারতে সংসদীয় ভোটপ্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখার এত দাবি, তার কারণ, তা গণতন্ত্রের নির্মাল্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। এর বিপরীত কাণ্ড ঘটলে, অর্থাৎ ভোটপ্রক্রিয়া অস্বচ্ছ ও কলুষিত হলে, গণতন্ত্রের বুনিয়াদি ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়বে। তবে কি সিস্টেমের মধ্যেই এমন কোনও পিছুটান থেকে যায়, যা ভোটপ্রক্রিয়াকে অবাধ ও সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠতে দেয় না? যদি তা-ই হয়, তবে এখানেও ‘সত্য’-কে ‘ভুয়া’ প্রতিপন্ন করার খেলাটি সক্রিয় রয়েছে– বলা যায়। দেবতার মতোই কখনও কখনও দুর্নীতির জন্মও পরিকল্পিতভাবে ঘটে পারে বইকি!

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement