Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2025

নতুন জামা নয়, চেনা উর্দিই গায়ে ওঠে! পুজোয় সবার ছুটি, পুলিশের ছোটার সময়

পরিবার ছেড়ে কেমন কাটে পুলিশের পুজো? কলম ধরলেন হাওড়া মহিলা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক কাকলি ঘোষ কুণ্ডু।

Durga Puja 2025: How police spend Durga Puja
Published by: Subhankar Patra
  • Posted:September 3, 2025 4:27 pm
  • Updated:September 4, 2025 7:47 pm   

দুর্গাপুজো মানেই ঘরে ফেরার ডাক! ঘরের মেয়ের ঘরে ফেরার আনন্দে মাতে আপামর বাঙালি। রাস্তায় নামে জনতার ঢল। আর সেই ভিড় সামলাতে রাস্তায় অতন্দ্র প্রহরী বাংলার পুলিশ। বাড়ি-পরিবার-সন্তান ছেড়ে তাঁরা প্রত্যেকে বঙ্গবাসীর নিরাপত্তায় নিবেদিত প্রাণ। কেমন কাটে সেই পুলিশকর্মীদের পুজো? কলম ধরলেন হাওড়া মহিলা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক কাকলি ঘোষ কুণ্ডু।

Advertisement

পুলিশের জীবনে তিন বার নেই। শনিবার, রবিবার আর পরিবার। আপনাদের ছুটির সময় আমাদের ছোটার সময়। পারিবারিক অনুষ্ঠানেও সময়মতো পৌঁছাতে পারি না। চাকরিতে জয়েন করে বিষয়টা মানতে খুবই কষ্ট হত। প্রথম দিকে পরিবারকে বোঝাতে বেশ কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু সময় সব কিছু ঠিক করে দেয়। আর মানুষ তো অভ্যাসের দাস। পুজোয় পথে নামা জনতার ঢলের নিরাপত্তার গুরুদায়িত্ব আমাদেরই কাঁধে। রাজ্যজুড়ে হাজার হাজার উর্দিধারী নিরাপত্তায় যুক্ত থাকেন। পুজোর রাতে যতক্ষণ মানুষ পথে থাকে পুলিশকে সতর্ক থাকতে হয়। দেখা যায় যে পুলিশকর্মীর বাড়ি মুর্শিদাবাদ, তাঁর পোস্টিং রয়েছে হাওড়ায়। তিনি হয়তো একটানা আট-দশ দিন বাড়িই ফিরতে পারেন না। থাকতে হয় বারাকে। নতুন জামাকাপড় নয়, চেনা উর্দিই গায়ে ওঠে। 

Durga Puja 2025: How police spend Durga Puja

পরিবার যেমন মায়া, আমাদের গায়ের পোশাকটাও তাই। একবার গায়ে উঠলে নিজের আনন্দ-দুঃখ সব গৌণ হয়ে ওঠে। রক্তের আপনজনদের থেকে দূরে থেকেও একটা গোটা এলাকা অজান্তেই বড্ড আপন হয়ে ওঠে। দুর্গাপুজো (Durga Puja 2025) মানে বাঙালির ঘরে ফেরার ডাক! কিন্তু বিগত সাতাশ বছর পুজোমণ্ডপে গিয়ে আনন্দ করিনি। সহ-নাগরিকের আনন্দকে সুরক্ষিত করেছি। আমি জানি আরও অনেক সিনিয়র অফিসার ও কর্মীরা আরও বেশি সময় ধরে এই কাজটাই করে আসছেন।

আমার সেই দিনগুলো আজও মনে পড়ে… ছেলে তখন ছোট। বায়না ধরত আমার সঙ্গে ঠাকুর দেখবে। কোনও রকমে বুঝিয়ে, পরিবারের হাতে রেখে বেরিয়ে এসেছি। সময়ের সঙ্গে বুঝেছি মায়ের কাজ কতটা কঠিন। এদিকে কাঁধে বড় পরিবারের দায়িত্ব। আমরা অন্যের আনন্দে খুশি হই। রাস্তায় বৃদ্ধবৃদ্ধার মধ্যে নিজেদের মা-বাবার ছায়া দেখি। বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোর হাসিতে খুঁজে নিই নিজেদের সন্তানদের মুখ। আশপাশের মুখগুলিতে আমরা প্রিয়জনের মুখের আদল খুঁজি। তবুও অজান্তে চোখ ভিজে যায়, যখন সাদা পাজামা-পাঞ্জাবিতে বাবার মতো কাউকে দেখি। গলার কাছে কষ্ট দলা পাকিয়ে ওঠে।

Durga Puja 2025: How police spend Durga Puja

তিন বছর হল বাবা নেই। ২০২২ সালেও বাবা হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে জামা কিনতে বলেছিলেন। জামা কিনলাম কি না খোঁজ নিয়েছেন। কাঁপা হাতে উলটে-পালটে দেখে বলেছেন কী সুন্দর! নতুন পোশাকে আমাকে কেমন দেখাচ্ছে তা দেখবার জন্য বাবার মতো উৎসুক কাউকে দেখিনি। বাবা চলে যাওয়ার পর দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2025) নিজের জন্য একটা সুতোও কিনি না। বুকের ভিতর বড় শূন্যতা। মায়ের লাল পাড় গরদের শাড়িতে সকাল কাটিয়ে দিই। বিকালে শুধুই পোশাক খাকি বা সাদা পোশাক। বছর তিনেক আগেও বাবা-মা, ছেলেকে নিয়ে মামাবাড়িতে অষ্টমীর সকালে অঞ্জলি দিয়েছি। ভাবিনি মাথার ওপর থেকে বটের ছায়া হঠাৎই হারিয়ে যাবে।Durga Puja 2025: How police spend Durga Puja

চাকরির জন্য বাবাকে কাছে থেকে সময় দিতে পারিনি। মা-ছেলেকেও সময় দিতে পারি না। হয়তো সাহেবের অনুমতি নিয়ে এক ঘণ্টার জন্যই সকালে বাড়ি গেয়েছি। যেটুকু সময় বার করতে পারি মা-ছেলের কাছে থাকি। পাশে বসে গভীর শ্বাস নিই। যাঁরা ভাবছেন এই পুজোয় বাবা-মাকে সময় দিতে পারবেন না, আরও একবার ভাবুন। একটু সময় বাঁচিয়ে, পাশে গিয়ে বসুন। মনে রাখবেন আজকের সময় আজকেরই। আগামিকাল হয়তো খুব দেরি হয়ে যাবে।

ডিউটি করতে গিয়ে দেখেছি মায়ের মুখে একশো আট প্রদীপের আলো দীপ্যমান। মা আমাদের ঘরের মেয়ে। বাপের বাড়ি আসেন বছরে একবার। আমরা তাঁকে আদর দিই, ভক্তি দিই, ভালবাসি। নবমী তিথিতে কুমারী পুজোর মধ্যে দেবীর আরাধনা হয়। কোথাও আবদুল্লা আর শম্ভু একসঙ্গে মায়ের মূর্তি গড়ে। তো কোথাও কোলের মেয়ে দেবীর আসনে পূজা নৈবেদ্য পায়। প্রতিটি শিশুকন্যাই এমন যত্ন পাক। নিরাপদে আনন্দে পরিচর্যায় বেড়ে ওঠুক। একদিন দশ হাতে দুর্গা হয়ে জগৎ সামলাক।

Durga Puja 2025: How police spend Durga Puja

পুলিশের চাকরি করি বলে দুঃখকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। মায়ের কাছে শক্তি চাই যেন অবিচল নিষ্ঠায় মানুষের দুঃখ বিমোচনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারি। নিজের প্রিয়জনের কাছে যেতে নাই বা পারি, উৎসবের দিনে আপনাকে একা ছেড়ে চলে যাব না, পাশে থাকব। আপনার নিরাপত্তা আমার অগ্রাধিকার।

দুর্গাপুজোর আর হাতে গোনা কয়েকদিন বাকি। দেবী দুর্গার মধ্যে আমরা আমাদের মেয়েকে দেখি। এই দুর্গাপুজোয় আমাদের অঙ্গীকার আমাদের ঘরের উমার দল লেখাপড়া শিখে মানুষ হোক। এই যুগের সব মেয়ে দশবিদ্যায় দশভুজা হয়ে উঠুক। প্রার্থনা সবার ভালো হোক। সব অসুরের নিধন হোক। রক্তমাংসের দুর্গা সুরক্ষিত থাক, আলোয় থাক।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ