সৌরভ মাজি, বর্ধমান: স্ত্রী-সন্তানদের চেয়ে মদই প্রিয়। রোজগারের সব টাকা স্বামী উড়িয়ে দিচ্ছে মদে। প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে আক্ষেপ করছিলেন মহিলা। হাতের ক্ষত দেখিয়ে মহিলার মন্তব্য, “কিছু বলতে গেলেই মারধর করছে। সন্তানরাও রেহাই পাচ্ছে না।” আরও এক গৃহবধূর অনুযোগ, “কীভাবে যে সন্তানের মুখে একমুঠো খাবার তুলে দিচ্ছি, তা মুখে বলে বোঝাতে পারব না।”
স্বামীদের মদ্যপানের প্রতি আসক্তি এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে তা আর সহ্য করতে পারছেন না স্ত্রীরা। একজোট হয়ে হাজির থানায়। এভাবেই পুলিশের কাছে স্বামীদের মাদকাসক্তি ও অত্যাচারের করুণ কাহিনী শুনিয়ে অভিযোগ জানালেন তাঁরা। পাশাপাশি, গ্রামে মদের বেআইনি কারবার বন্ধের আর্জিও জানান তাঁরা। পূর্ব বর্ধমানের গলসি থানায় গিয়ে অভিযোগ জানান বাহিরঘন্ন্যা গ্রামের হাজরা পাড়ার একদল মহিলা।
[‘ প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল আর বাঁচব না’]
গৃহবধূ অন্ন বাগ, জ্যোৎস্না বাগ, বাসন্তী বাগ, কল্পনা বাগ, চন্দনা বাগ-সহ বেশ কয়েকজন মহিলা এদিন গলসি থানায় এসেছিলেন। তাঁরা লিখিতভাবে অভিযোগও জমা দিয়েছে। যদিও এদিন তাঁদের কোনও রিসিভিড কপি অবশ্য দেওয়া হয়নি থানা থেকে। সেই অভিযোগে ওই মহিলা জানিয়েছেন, মদের জন্য প্রত্যেক সংসারে অশান্তি লেগে থাকছে। পরিবারের পুরুষ রোজগারের টাকা মদেই খরচ করে দিচ্ছে। ওই মহিলারা জানান, মদ্যপ স্বামীদের অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে। বীশবা বাগ নামে অভিযোগকারী এক মহিলা বলেন, “মদ খেয়ে স্বামীরা বাড়িতে এসে অত্যাচার করছে। রবিবারও এক মহিলাকে বেধড়ক মেরেছে তাঁর মাতাল স্বামী। মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।” কল্পনা বাগ, সুমিত্রা বাগরা বলেন, “ওদের কাছে মদটাই সব থেকে প্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা স্ত্রীরা যেন কেউ নই। সন্তানদের কথাও ভাবে না।”
[মা লক্ষ্মীর কৃপায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে কুলটির ‘ভূতগ্রাম’-এ]
ওই মহিলারা জানান, গ্রামে দুই-একজন এখনও লুকিয়ে-চুরিয়ে চোলাই মদ তৈরি করে। তবে তা খুবই কম। কিন্তু পাশের জয়কৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে চোলাই কিনে এনে বাহিরঘন্ন্যা গ্রামের কয়েকজন বিক্রি করছে। সেখান থেকেই চোলাই কিনে খেয়ে বাড়িতে এসে অশান্তি করছে পুরুষরা। এর আগে ওই মহিলারা পুলিশকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন। গ্রামে পুলিশও গিয়েছিল। কিন্তু কাউকে ধরতে পারেনি। তার পর থেকে গ্রামে বেআইনিভাবে এই মদের কারবার বেড়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা। পুলিশের এক আধিকারিক অবশ্য জানিয়েছে, বেআইনি মদের কারবার বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। সম্প্রতি গলসির বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর বেআইনি মদ উদ্ধার হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে বেআইনি এই কারবারে যুক্ত থাকায়। ফের অভিযান চালানো হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। মাতাল স্বামীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ স্ত্রীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে সন্তানদের বাঁচাতে নিজেরাই বেআইনি মদের কারবার বন্ধে অভিযান করবেন। নারীশক্তির প্রদর্শন কাকে বলে তখন টের পাবে বেআইনি কারবারিরা। মদ্যপ স্বামীরাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.