Advertisement
Advertisement
কন্যাসন্তান

কন্যাসন্তান জন্মানোর ‘অপরাধ’, স্বামীর মারে শ্রবণশক্তি হারানোর আশঙ্কা গৃহবধূর

অভিযোগ, কন্যাসন্তান জন্মানোয় গৃহবধূর বাবার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেয় তাঁর স্বামী৷

Woman thrashed for giving birth to girl child at Diamond Harbour
Published by: Sayani Sen
  • Posted:June 28, 2019 2:25 pm
  • Updated:June 28, 2019 2:25 pm   

সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সেটাই নাকি তাঁর ‘অপরাধ’। আর তার জেরেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লাগাতার অত্যাচারের মাশুল গুনতে হচ্ছে বছর কুড়ির এক গৃহবধূকে। গুণধর স্বামীর মারে মারাত্মক জখম হয়ে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে ভরতিও ছিলেন তিনি। কয়েকদিন আগেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন গৃহবধূ। তবে দু’টি কানেই শ্রবণক্ষমতা প্রায় হারাতে বসেছেন তিনি৷ অপরাধীদের কঠোরতম শাস্তি চান গৃহবধূ।

Advertisement

২০১৪ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির শ্রীনগর গ্রামের বাসিন্দা রাকিবউদ্দিন খানের সঙ্গে সম্বন্ধ করেই বিয়ে হয় ডায়মন্ড হারবার থানার চাঁদনগরের বসন্তপুরের বাসিন্দা রোকেয়ার। বিয়ের বছরদুয়েক পর কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি৷ কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ায় অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তারপর থেকেই গৃহবধূর উপর অত্যাচার শুরু৷ শ্বশুরবাড়ির নানা অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করতে থাকেন তিনি। অভিযোগ, কন্যাসন্তানটিকে খুন করার চেষ্টাও করে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। সন্তানকে বাঁচাতে অসহায় রোকেয়া একদিন হঠাৎই বাপের বাড়িতে চলে আসেন। মেয়ের মুখে সব শুনে বাবা আবদুল মাতিন মোল্লা জামাই রাকিব ও তার বাড়ির লোকজনকে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান। উদ্দেশ্য ছিল জামাই ও তার আত্মীয়দের বুঝিয়ে সমস্যার সমাধান করা। অভিযোগ, রোকেয়ার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা শর্ত দেয় ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই কন্যাসন্তানকে মেনে নিতে পারেন তাঁরা।  মেয়ের সুখের কথা ভেবে মুখ বুজে সে শর্ত মেনেও নেন অসহায় বাবা। ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন জামাইয়ের হাতে।

আরও পড়ুন: নরেন্দ্রপুুরে বাড়ির কাছেই উদ্ধার নিখোঁজ যুবকের দেহ, অধরা মূল অভিযুক্ত]

সেদিনই বছর তিনেকের কন্যাসন্তানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ফিরে যান রোকেয়া। তবে অত্যাচার থামেনি৷ পরিবর্তে পরিমাণ বাড়তে থাকে৷ রোকেয়া বলেন, “আমার স্বামী, শাশুড়ি, ভাসুর, জা ও স্বামীর কাকা সকলেই আমি এবং আমার মেয়ের উপর অত্যাচার শুরু করে। গালিগালাজ ছাড়াও মারধর করা হত আমাকে। খেতে পরতে দিত না। মেয়েটাকে অনেকবারই আমার কোল থেকে কেড়ে নিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে ওরা। কিন্তু আমি বুকে আঁকড়ে ধরে বাঁচিয়েছি ওকে। প্রায়ই টাকার দাবি করত ওরা। কয়েকমাস আগে আমাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। বাপের বাড়ি চলে আসি৷ সম্প্রতি আমার স্বামী এখানে এসে বাবার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি বাবাকে ওই টাকা দিতে বারণ করি। তর্ক-বিতর্কের মাঝে হঠাৎই স্বামী আমাকে লোহার রড দিয়ে মারতে থাকে। দু’কানে মারাত্মকভাবে আঘাত পাই। আমাদের কান্নাকাটি আর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে৷ পালিয়ে যায় স্বামী।” বেশ কয়েকদিন ধরে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাও চলে তাঁর৷ 

[ আরও পড়ুন: গরু পাচারের অভিযোগ ঘিরে সংঘর্ষ দিনহাটায়, বিজেপির পার্টি অফিসে ভাঙচুর]

ডায়মন্ড হারবার মহিলা থানায় স্বামী, শাশুড়ি, ভাসুর, জা ও স্বামীর এক কাকার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন ওই গৃহবধূ। তবে এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি৷ মহিলা থানার অফিসার ইনচার্জ অমৃতা দাস বলেন, ‘‘অত্যাচারিতা গৃহবধূর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই অভিযুক্তরা ধরা পড়বে৷’’ রোকেয়া জানে না কানে আর কোনওদিন ভাল করে শুনতে পাবে কিনা। তবে নিজেকে নিয়ে আর ভাবেন না রোকেয়া। তাঁর সব স্বপ্ন এখন মেয়েকে ঘিরেই। নিজের মনের মতো করে মানুষ করতে চান ছোট্ট মেয়েটাকে। মেয়ে হয়ে জন্মানো যে অপরাধ নয়, একজন মেয়েও যে সমাজের নানা উপকারে লাগতে পারে সেটাই প্রমাণ করতে চান রোকেয়া৷ তার জন্য নিজের যত কষ্টই হোক শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়াই চ্যালেঞ্জ গৃহবধূর।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ