Advertisement
Advertisement
Katwa

কৃষিদপ্তরের মেশিন পুরনো লোহার দরে বিক্রি! তৃণমূল নেতা স্ত্রীর ‘কীর্তি’তে ক্ষোভ কাটোয়ায়

কেন মেশিনগুলি এতদিনেও কৃষকদের হাতে পৌঁছল না, সেই প্রশ্নের সদুত্তর নেই।

Wife of TMC leader allegedly sold machines for the farmers given by govt

কৃষিদপ্তরের দেওয়া পাট নিড়ানোর মেশিন বিক্রি করা হচ্ছিল। ছবি: জয়ন্ত দাস

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 24, 2025 9:45 pm
  • Updated:August 24, 2025 9:51 pm   

ধীমান রায়, কাটোয়া: কৃষিদপ্তর থেকে কৃষকদের জন্য দেওয়া হয়েছিল পাটজমি নিড়ানোর মেশিন। এক ডজনেরও বেশি মেশিন কৃষি অফিস থেকে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন তৃণমূল নেতা। চাষিদের হাতে একবছর ধরে পৌঁছায়নি সরকারি অনুদানের সেই মেশিনগুলি। শেষে ভাঙাচোরা সামগ্রী কেনাবেচার ব্যবসায়ীর হাতে পুরনো লোহার দরে মেশিনগুলি বিক্রি করে দিলেন তৃণমূল নেতার ঘরনি! তাঁর এমন ‘কীর্তি’ হাতেনাতে ধরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই ঘটনায় রবিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার সাগরপুর গ্রামে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। মেশনগুলি-সহ ভাঙাচোরা সামগ্রী কেনাবেচার ওই ব্যবসায়ীকে আটক করে রাখেন গ্রামবাসীরা। শেষে পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। পুলিশ ওই মেশিনগুলি আটক করে নিয়ে যায়। পাশাপাশি ভাঙাচোরা সামগ্রীর ব্যবসায়ী জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

Advertisement

সরকারি সামগ্রী কৃষকদের হাতে না দিয়ে এভাবে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনায় কৃষিদপ্তরের আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। কেন কৃষকদের হাতে সরাসরি সরকারি অনুদানের মেশিন না দিয়ে শাসকদলের নেতার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল? এই প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কাটোয়া ২ ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা সুমনা মণ্ডল বলেন, “ওই মেশিনগুলি পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রামপঞ্চায়েতের মাধ্যমে চাষিদের মধ্যে বিলি করার জন্য দেওয়া হয়েছিল। তারপর কী ঘটেছে সঠিক বলতে পারছি না। তবে সমগ্র ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে এদিন রবিবার তখন দুপুর। কাটোয়ার শ্রীবাটি পঞ্চায়েতের সাগরপুর গ্রামের মাঝেরপাড়ায় ভাঙাচোরা সামগ্রী কেনাবেচার এক ব্যবসায়ীকে আটক করেন কয়েকজন গ্রামবাসী। জানা যায়, তাঁর নাম জাকির শেখ। কাটোয়ার কৈথন গ্রামের বাসিন্দা। জাকির তাঁর পুরানো একটি বাইকে ঝুড়ি লাগিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভাঙাচোরা সামগ্রী কেনেন। তারপর সেগুলি আড়তদারের কাছে বিক্রি করেন। জাকিরের ওই ঝুড়িতেই এদিন হলুদ রং করা অব্যবহৃত বেশ কিছু ‘ক্রাইজাফ নেল উইডার’ বা পাটজমি নিড়ান করার মেশিন দেখতে পান স্থানীয় গ্রামবাসীরা।

রবিবার ধরা পড়ে যায় মেশিন বিক্রির বিষয়টি। ছবি: জয়ন্ত দাস।

স্থানীয় গ্রামবাসী শরিফ মির্ধা, আবদুর রহমান মোল্লারা বলেন, “ওই ভাঙাচোরা কারবারির কাছে মেশিনগুলো দেখেই বুঝতে পারি এগুলো সরকারি জিনিস। কোথা থেকে পেল জানতে চাইলে জাকির জানায় এগুলি মুলটি গ্রামের বাসিন্দা কুরবার মির্ধার বাড়ি থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে কিনে এনেছে। তখনই আমরা বুঝতে পারি কৃষকদের জন্য দেওয়া সরকারি অনুদানের মেশিনগুলি চাষিদের না দিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।”

জানা গিয়েছে, মুলটি গ্রামের বাসিন্দা কুরবার মির্ধা কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ। তিনি খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসেন। তখন তাঁকে ঘিরে স্থানীয়রা একপ্রস্থ বিক্ষোভ দেখান। কুরবানের দাবি, “আমার স্ত্রী ভুল করে এগুলো পুরানো লোহার দরে বিক্রি করে দিয়েছেন। এটা সরকারি জিনিস। এভাবে বিক্রি করা ঠিক হয়নি।”

কিন্তু কেন এতদিন এগুলো কৃষকদের না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন? এই প্রশ্নে কুরবান মির্ধার জবাব, “আমাদের এখানে পাটচাষের ততটা চল নেই। আমি পরে চাষিদের কাছে পৌঁছে দিতাম। মেশিনগুলো গোডাউনে ঢুকিয়ে রাখার পর ধান রাখা হয়েছিল। সেজন্য বের করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি ধান বিক্রি করার পর আমার স্ত্রী দেখতে পেয়ে ভুল করে বিক্রি করে দিয়েছেন।” এদিন ঘটনা ঘিরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। মেশিনগুলি আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পাশাপাশি কুরবান মির্ধা ও জাকির শেখকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। যদিও পুলিশ জানায় এদিন বিকেল পর্যন্ত এনিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের হয়নি।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ