সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কংগ্রেসের নেতৃত্বে একজোট হয়ে বিরোধীরা যখন রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের প্রস্তাবিত তিল তালাক বিলের বিরুদ্ধে তুলকালাম জুড়ে দিয়েছে, তখনই এই রাজ্য থেকে বিজেপিকে বিলটি নিয়ে তুলোধোনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন তালাক বিরোধী বিল পাস করাতে মোদি সরকার যখন মরিয়া, তখন বীরভূমের সভা থেকে এই বিল নিয়ে প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার চতুর্থ জঙ্গলমহল উৎসবের সূচনা করে মমতা বলেন, ‘আমরা মেয়েদের পক্ষে। কিন্তু, এই ভুল বিলে মহিলাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি তো দূরের কথা, মহিলারা আরও বিপদে পড়ে যাবেন। এই বিলের নামে বিজেপি রাজনীতি করছে।’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল না থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেস একমাত্র দলে যাদের ৩৩% মহিলা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছে। আমরা ৭৩১ দিন মাতৃত্বকালীন ছুটি দিই সন্তানকে মানুষ করার জন্য। মহিলাদের সম্মান দেওয়া আমাদের কাজ। কিন্তু, ধর্মীয় অনুশাসনে হস্তক্ষেপ করা আমাদের কাজ না, যে যার নিজের ধর্ম মেনে চলবেন।’ তাঁর মতে, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ‘সতীদাহ প্রথার সংস্কার বাংলা থেকে হয়নি? বাল্যবিবাহ রোধ বাংলা থেকে হয়নি? বিধবা বিবাহ প্রথা বাংলা থেকে চালু হয়নি? বাংলা নবজাগরণ ঘটায়। বাংলা পথ দেখায়। বিজেপি এসে দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়।’ এই রাজ্যে বিজেপি ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী পূর্বসূরী সিপিএমকে আক্রমণ করে বলেন, ‘বামেদের মত নাস্তিক আমি নই। আমরা সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাস করি। আমরা সব ধর্মকেই সম্মান করি। আমরা যেমন দুর্গাপুজো করি, তেমনই ইদ উদযাপন করি। আমি প্রত্যেক বড়দিনে চার্চে যাই।’
We are for this bill, as SC deemed the practice as unconstitutional & that is what the bill says, we agree with it, but when it comes to criminalization, neither minority nor majority judgement (of SC) mentioned it, that is what we oppose: Kapil Sibal, Congress
— ANI (@ANI)
এদিন রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘আমরা তিন তালাক বিলের বিরোধী নই। তবে আমাদের মনে হয় সব পক্ষের মতামত নেওয়া উচিত। আমরা বিলটিতে সংশোধনের দাবি জানিয়েছি।’ তৃণমূল চায়, বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক। একই দাবি বিরোধীদেরও। পালটা বিরোধীদের আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ২৪ ঘণ্টা আগে না জানিয়ে বিকেল তিনটেয় হঠাৎ সিলেক্ট কমিটির কাছে পাঠানোর প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এতে সংসদ অবাক হয়েছে। যাঁরা দেখছেন তাঁরাও অবাক। এই প্রস্তাব পেশের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। জেটলির যুক্তি, তিন তালাক বিরোধী বিলকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দরকারই নেই। কারণ সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাককে অনুচিত ও অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়েছে। বিরোধীদের তুমুল হইচইয়ে আগামিকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে গিয়েছে রাজ্যসভা, যার মূলে কংগ্রেসের দু’মুখো নীতি দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন রবিশঙ্কর প্রসাদ। তবে সবমিলিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষে এই বিল পাস করাতে বিজেপিকে যে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে, সেটা এবার প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে।
Sukhendu Sekhar Roy makes a Point of Order regarding
— AITC (@AITCofficial)
মমতাও বিজেপিকে চাপে রাখতে কোনও কসুর করছেন না। তিল তালাক ছাড়াও ‘সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট’-এর নামে অসমে বাঙালিদের চক্রান্ত করে রাজ্য থেকে তাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘সব রাজ্যে অন্য রাজ্যের লোক থাকে। কারণ, এটা তাঁদের অধিকার। সব জায়গার লোক সব জায়গায় কাজের জন্য যায়। কাজকে ভালবেসে সংসার তৈরি করে। ৩০-৪০ বছর ধরে যাঁরা রয়েছেন, আজকে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের নামে প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষেরও বেশি মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।’ বিজেপিকে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘এই অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। আগুন নিয়ে খেলবেন না। সারা ভারতে আগুন জ্বালাবেন না। আর যদি লোকেদের গায়ে হাত পড়ে, সে বাঙালি পাঞ্জাবি যেই হোক, আমরা ছেড়ে কথা বলব না।’ আজ বীরভূমে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় বেশ কিছুক্ষণ ঘোরেন মুখ্যমন্ত্রী, হাত মেলালেন পথচলতি মানুষদের সঙ্গে। রাস্তার দু্’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সমর্থকদের মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী, নমস্কার করলেন সমর্থকদের। যা দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জেলায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন মমতা।
makes a Point of Order regarding Triple Talaq Bill | WATCH
— AITC (@AITCofficial)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.