সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: দেড় মাসেও বাঘটিকে খাঁচা-বন্দি করা গেল না? তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া গেল না স্বস্তির ঘন জঙ্গলে? শিকারিদেরও আটকানো গেল না? লালগড়ে রয়্যাল বেঙ্গলের মৃত্যুকে ঘিরে উঠতে শুরু করল প্রশ্ন৷
বাঘটি একেবারেই অজ্ঞাতবাসে ছিল, তাও না৷ শত চেষ্টা করেও নাগালই পাওয়া গেল না? মাঝে মধ্যেই সে তার উপস্থিতির জানান দিয়েছে৷ কখনও খাঁচায় বাঁধা ছাগলকে দেখে ফিরে গিয়েছে, কখনও আবার ক্যানালের পাইপে প্রায় বন্দি হয়ে পড়েছিল৷ গত দেড়মাসে বাঘবন্দি অভিযানে আকাশে ড্রোন চক্কর কেটেছে, ঐরাবত গাড়ি করে সারারাত জাগতে গিয়ে দুই বনকর্মীর মৃত্যু হয়েছে৷ তবুও, তাকে ধরা যায়নি৷ এই তো সেদিনই পরিকল্পনা করা হল সুন্দরবন থেকে আনা হবে কুকুর৷ তারাই নাকি খুঁজে বের করবে বাঘকে৷
বাঘটি বল্লমে বিদ্ধ মারা গিয়ে বন দপ্তরের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল৷ রয়্যাল বেঙ্গলের মৃত্যুতে বন্যপ্রাণপ্রেমী থেকে পরিবেশ প্রেমী, সবাই সরব৷ বন দপ্তর কেন ধরতে পারল না বাঘটিকে। বনকর্মীদের একাংশ বারবার স্বীকার করেছে, যেহেতু এই এলাকার জঙ্গলে বাঘ আসে না, তাই তাদের তাড়ানো বা খাঁচাবন্দি করার পন্থা রপ্ত নেই৷ তাই সুন্দরবন থেকে আনা হয়েছিল বাঘ বিশেষজ্ঞদের। এক প্রাক্তন বন আধিকারিক অবশ্য কাঠগড়ায় তুলেছেন স্থানীয় আদিবাসীদের।তাঁর বক্তব্য, এই শিকারের নামে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা পরিবেশের পক্ষে খুব ক্ষতিকর৷ লালগড়ের মানুষ সেখানেই প্রশ্ন তুললেন৷ বন দপ্তর কেন পারল না বাঘ-মানুষের এই সংঘর্ষ এড়াতে?
বন দপ্তরের কর্মীরাই মনে করছেন, জঙ্গল শান্ত থাকলে বাঘটিকে বাঘঘরার জঙ্গলে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হত না৷ বন দপ্তর পারেনি। সেকথা কার্যত স্বীকারও করে নিয়েছেন প্রধান মুখ্য বনপাল রবীকান্ত সিনহা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের লোকবল দিয়ে আদিবাসীদের ঠেকানো সম্ভব ছিল না৷ আদিবাসীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিলে তাদের ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া হত৷ তাতে অন্যরকম সমস্যা সৃষ্টি হত৷ সবদিকই ভাবতে হয়৷’’ যদিও বনদফতরের পক্ষ থেকে জঙ্গল শান্ত রাখার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল৷ শিকারিদের পায়েধরে জঙ্গলে প্রবেশ নিষেধ করেছিলেন বন কর্তারা৷ কিন্তু সেই নিষেধ উপেক্ষা করেই লালগড়ে সহ লাগোয়া জঙ্গলগুলিতে চলছিল দেদার শিকার৷
প্রশ্ন উঠেছে, একটা মাত্র বল্লমের আঘাতে এত দ্রুত মৃত্যু কি সম্ভব রয়্যাল বেঙ্গলের? প্রধান মুখ্য বনপাল রবীকান্ত সিনহা বলেন, ‘‘শিকারিদের আক্রমণে বাঘটি মারা গিয়েছে৷’’ রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, ‘‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল বাঘটিকে জীবিত অবস্থায় ধরার৷ চিকিৎসা করার কথা ছিল ঝড়খালিতে৷ উত্তরবঙ্গে নিয়ে আসার কথা ছিল৷ বাঘটি বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড হয়ে এসেছিল৷ সুন্দরবনে ওর থাকার পরিবেশ ছিল না৷ আদর্শ জায়গা ছিল আলিপুরদুয়ারের বক্সা৷ কিন্তু আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি৷ দু’জন বনকর্মী মারা গিয়েছেন৷ বিড়াল জাতীয় প্রাণীরা কখন কোথায় থাকে ঠিক বোঝা যায় না৷ ড্রোন দিয়ে খোঁজা হয়েছে৷ পুলিশ সাহায্য করেছে৷ এর মধ্যে এর মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক৷ প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পর খতিয়ে দেখে তদন্ত কমিটি বা তদন্ত কমিশন গঠন করার বিষয়ে নেওয়া হবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.