Advertisement
Advertisement
Bankura

সন্তান চলচ্ছক্তিহীন, ভিক্ষা করেই সংসার চালান স্বামীহারা বৃদ্ধা ! পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস প্রশাসনের

আধার না থাকায় কোনও প্রকল্পেই নাম নেই এই মা-ছেলের।

Old lady in Bankura begs to earn livelihood, administration unaware

সন্তান চলচ্ছক্তিহীন, ভিক্ষা করেই সংসার চালান স্বামীহারা বৃদ্ধা। নিজস্ব চিত্র

Published by: Paramita Paul
  • Posted:July 2, 2025 6:55 pm
  • Updated:July 2, 2025 7:22 pm   

টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: ষষ্ঠী মণ্ডল—বয়সে বৃদ্ধা, শরীরে নেই বলার মতো শক্তি, চোখে তীব্র অনিশ্চয়তার ছায়া। বাঁকুড়ার জগদ্দল্লা ২-এর বাইন্দকা গ্রামে দিনের পর দিন অর্ধাহারে থেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন এই একরোখা মা। পাশে অসুস্থ একমাত্র ছেলে তাপস, বয়স ২৭—যে এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতেও পারে না। চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকে, সারা শরীরে অপুষ্টির ছাপ। ঘরে অন্ন নেই, ওষুধ নেই, সহানুভূতিও নেই। আছে শুধু দীর্ঘ প্রতীক্ষা—কবে কেউ কিছু শুনবে! ষষ্ঠীর দিন কাটে হাতে পেতে—ভিক্ষা করে। নিজের ছেলের জন্য, নিজের ন্যূনতম পেট ভরানোর জন্য। অগোছালো চুল, মুখে অস্থিরতা—এই মানুষটা শুধুই এক মা নন, যেন এক জীবন্ত অভিশাপের প্রতিচ্ছবি। বিয়ের পর তাপসকে জন্ম দেওয়ার পরেই নিখোঁজ হয়ে যান তাঁর স্বামী।

Advertisement

ষষ্ঠীর আধার কার্ড নেই, নেই রেশন, নেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভরসা। আধার না থাকায় কোনও প্রকল্পেই নাম নেই এই মা-ছেলের। ফলে দিনের পর দিন কাটছে না খেয়ে। গত সপ্তাহে লাগাতার বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছে ষষ্ঠীর মাথার উপরের কোনওরকমে টিকে থাকা ছাদ। আর তার পরেই ওই মা-ছেলের ঠাঁই হয়েছে স্থানীয় বাইন্দকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে। স্কুল বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া এই পরিবারটির অবস্থার প্রসঙ্গে ওই বাইন্দকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তিলোত্তমা পরামানিক বলেন, “স্কুলের ঘরেই থাকছেন এখন। আমরা একবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করছি, কিন্তু সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া কিছুই করা সম্ভব নয়।” আরও অবাক করার বিষয় হল —গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জানেনই না কিছু!

 

স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান কল্পনা মণ্ডল বলেন, “ষষ্ঠী মণ্ডলের এমন অসহায় অবস্থার কথা আমি জানতাম না। এখন বিষয়টি জেনেছি, দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।”বাইন্দকা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা শ্যামলী চেলের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমরা বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি প্রশাসনকে। আধার কার্ড না থাকায় সমস্যার মুখে পড়েছেন তাঁরা। তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলাশাসক এন সিয়াদকে এই বিষয়টি জানানোর পর তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, “এই পরিবারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আধার ও রেশন সংযুক্ত করে প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।”

কিন্তু এখানেই প্রশ্ন তুলছেন ষষ্ঠীদেবী?
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “আমাদের কিছু নেই। মরে গেলেও কেউ খবর রাখবে না। ছেলে অসুস্থ—দেখার কেউ নেই। আমি না থাকলে কে ওকে দেখবে? সরকার কি এই মাকে একটা আধার দিতে পারে না?” বছর সাতাশ আগে নিখোঁজ স্বামীর বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় সিঁথিতে সিঁদুর আর হাতে শাঁখা পরে রাস্তার দিকে চেয়ে থাকেন।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ