বাবুল হক, মালদহ: পরিযায়ী শ্রমিকের (IMigrant labour) কফিনবন্দি নিথর দেহ ফেরাতে ১৭ কাঠা জমি বন্ধক রাখতে হল সহায় সম্বলহীন পরিবারকে! আর এমন নির্মম ঘটনায় শোরগোল মালদহে(Malda)।ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে মালদহের পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। এবার পঞ্জাবে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় মালদহের চাঁচোলের পরিযায়ী শ্রমিক বছর পঁয়তাল্লিশের ইলিয়াস আলির। বৃহস্পতিবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে পঞ্জাবের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মৃত ইলিয়াস আলির কফিনবন্দি নিথর দেহ শনিবার এসে পৌঁছয় মালদহের চাঁচোলের বাড়িতে। কিন্তু অভিযোগ, জমি বন্ধক রেখে টাকার যোগান দিতে হয়েছে পরিবারকে। আর এই ঘটনা ঘিরেই তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে জেলাজুড়ে।
পরিবারের অভিযোগ, টাকার জন্য পাঞ্জাবের (Punjab) নার্সিংহোম থেকে দেহ ছাড়া হচ্ছিল না। বিল মেটানোর জন্য পরিবারকে রাতারাতি শেষ সম্বল ১৭ কাঠা চাষের জমি বন্ধক রাখতে হয়। তার পরই বিল মিটিয়ে দেহ আনা হয়। এদিন গ্রামে দেহ পৌঁছয়। যদিও এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের কোনও আধিকারিক কিংবা জনপ্রতিনিধিরা পরিবারের খোঁজ নেননি বলে অভিযোগ। মৃতের স্ত্রী হাসিনা বিবি বলেন, “স্বামীকে দেখার জন্য শেষ সম্বলটুকুও বন্ধক রাখতে হল। এখন পথে বসা ছাড়া আর উপায় নেই। সরকারি সাহায্য চাই।” তাঁর পরিবারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছেন। দুই ছেলেও ভিনরাজ্যে কর্মরত। এক মেয়ের সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে। মেয়ের বিয়ের ঋণ পরিশোধ করতেই পঞ্জাবের একটি রাইসমিলে কাজ করতে যান ইলিয়াস। এক সপ্তাহ আগে পাড়ি দেন। কিন্তু ফিরল নিথর দেহ।
উত্তর মালদহের চাঁচোল-১ নম্বর ব্লকের ভঞ্জনা গ্রামে বাড়ি ওই পরিযায়ীর। জমি বন্ধক রেখে দেহ ফেরানো নিয়ে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের ভূমিকায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প চালু থাকলেও কেন মৃত ওই পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারকে এভাবে দুর্ভোগে পড়তে হল? কেন মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পঞ্জাবে মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ ফিরিয়ে আনার জন্য কোনও রকম ব্যবস্থা করা হল না? চাঁচোলের মহকুমা শাসক সৌভিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই রকম বিষয় জানা নেই। তবে যদি এমনটা ঘটে থাকে অবশ্যই প্রশাসনিকভাবে তা তদন্ত করে দেখা হবে। পাশাপাশি সরকারি নিয়ম মেনে ওই পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারকে সবরকম সাহায্য করা হবে।”
মৃত ওই পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রী হাসিনা বিবি জানান, পঞ্জাবের একটি চালকলে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। কাজ করার সময় হঠাৎই পেটে ব্যথার জন্য অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর সেখানকার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। পরে অস্ত্রোপ্রচার করা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার চিকিৎসা চলাকালীন ওই নার্সিংহোমেই মৃত্যু হয় ইলিয়াস আলির। কিন্তু ওই নার্সিংহোমে অনেক টাকার বিল হয়। ওঁরা মৃতদেহ ছাড়ছিলেন না। হাসিনা বিবি বলেন, “অনেক রকমভাবে আমরা চেষ্টা করেছি মৃতদেহ ফিরিয়ে আনার। কিন্তু টাকা যোগাড় করতে পারিনি। বাধ্য হয়ে আমার শ্বশুরের নামে থাকা ১৭ কাঠা চাষযোগ্য জমি বন্ধক রেখেই ওই নার্সিংহোমের বিল মেটানো হয়। পরিবারের লোকরা সেখানে গিয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। সেই টাকা পরিশোধ করার পরেই মৃতদেহ ছাড়ে নার্সিংহোম।”
চাঁচোলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, “অবশ্যই এই পরিবারটি ক্ষতিপূরণ পাবে। আমরা আগে সমস্যাটি জানতে পারিনি। ব্যক্তিগতভাবে এবং বিধায়ক তহবিল থেকে সবরকম সাহায্য করা হবে। এই ঘটনা সম্পর্কে ওই পরিবারটি আমাকে এখনও কিছু জানায়নি। তাহলে হয়তো আগেই সহযোগিতা করা যেত।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.