Advertisement
Advertisement

Breaking News

kali Puja 2025

সুন্দরবনে ত্রিপুরাসুন্দরী নিজেই চান বলি! দেবীর সঙ্গে থাকেন না মহাদেব, জানুন পৌরাণিক কাহিনি

'কুব্জিকা তন্ত্র' অনুযায়ী ত্রিপুরাসুন্দরীর মন্দির ৪২ পীঠের একটি।

Kali puja 2025: sundarbans tripurasundari kali sacrifice system no shiv with the idol
Published by: Kousik Sinha
  • Posted:October 17, 2025 5:37 pm
  • Updated:October 17, 2025 5:41 pm   

সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: কলকাতা কিংবা বাংলাজুড়ে ছড়িয়ে কালীর বিভিন্ন রূপ। আছে বিভিন্ন প্রবাদ। যেমনটা রয়েছেন মা ত্রিপুরাসুন্দরী। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এক গ্রামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী তিনি। এলাকার মানুষের বিশ্বাস, ইনিই নাকি ত্রিপুরার দেবী ত্রিপুরেশ্বরী। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুরে তৎকালীন ছত্রভোগ অধুনা ছাতুয়া গ্রামের দেবী ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরে দীপান্বিতা অমাবস্যায় দেবী পূজিতা হন মা কালী রূপেই। স্থানীয়দের কথায়, ত্রিপুরাসুন্দরীর মহিমা অনেক। তাঁর কৃপা থেকে বাদ পড়েন না কেউই। আর তাই কালীপুজোর রাতে দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন সুন্দরবনে দেবী ত্রিপুরাসুন্দরীর কৃপা পেতে।

Advertisement

তথ্য বলছে, ত্রিপুরার প্রাচীন গ্রন্থ ‘রাজমালায়’ উল্লেখ রয়েছে সুন্দরবনের দেবী ত্রিপুরাসুন্দরীর কথা। ওই গ্রন্থে বলা রয়েছে, পৌরাণিক যুগে রাজা যযাতির পুত্র দ্রূহ্যু পিতার জরা গ্রহণ করেননি বলে পিতারই নির্দেশে আর্যাবর্ত থেকে কপিলমুনির আশ্রমে নির্বাসিত হন। সেই দ্রূহ্যুরই বংশধর রাজা প্রতদ্রোণ ত্রিপুরা বা কিরাত রাজ্য জয়ের পর সুন্দরবনের ছত্রভোগে এসে গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর ত্রিবেগ ধারার অববাহিকায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুরু করেন রাজত্ব। ছত্রভোগ গ্রামে মন্দির তৈরি করে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন দেবী ত্রিপুরাসুন্দরীর কাঠের মূর্তি। পরবর্তীকালে প্রতদ্রোণের পুত্র কলিন্দ স্বপ্নাদেশ পান, ধেয়ে আসছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলোচ্ছ্বাস। ত্রিবেগ এলাকা থেকে অবিলম্বে রাজ্যপাট গোটাতে হবে। বিলুপ্ত হবে গোটা এলাকা। ফিরতে হবে ত্রিপুরায়। স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজা কলিন্দ ফিরে যান ত্রিপুরায়। সেখানে গিয়ে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন ত্রিপুরাসুন্দরীর আদলে তৈরি আর এক বিগ্রহ দেবী ত্রিপুরেশ্বরীকে।

জনশ্রুতি রয়েছে, রাজা প্রতদ্রোণ নির্মিত কৃষ্ণচন্দ্রপুরের এই ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও জলোচ্ছ্বাসে একসময় চলে যায় ভূমিগর্ভে। এরপর পাল-সেন যুগে সেখানেই তৈরি হয় ত্রিপুরাসুন্দরীর নতুন মন্দির। পাথরে তৈরি দেবীমূর্তিতে শুরু হয় পূজার্চনা। শক্তির আরাধনায় মেতে ওঠেন তৎকালীন যুগের বহু মানুষ। কালের নিয়মে একসময় সেই মন্দিরও ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর ব্রিটিশ শাসনকালে তৈরি হয় নতুন মন্দির। সেই মন্দিরও ধ্বংস হয়। সেসবই আজ ইতিহাস। কৃষ্ণচন্দ্রপুরের বর্তমান ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির আজ সেই ইতিহাসকেই স্মরণ করায়। প্রায় আড়াইশো বছর আগে ফের তৈরি হয় ত্রিপুরাসুন্দরীর কাঠের তৈরি বিগ্রহ। শক্তিরূপিণী দেবী মা কালীর রূপকল্পনায় কালীপুজোয় এখানে ত্রিপুরাসুন্দরীর বিশেষ আরাধনায় মেতে ওঠেন হাজার হাজার মানুষ।

সুন্দরবনের প্রত্নতাত্ত্বিক ও গবেষক দেবীশংকর মিদ্যা বলেন, ”বর্তমান ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরের ভূমিগর্ভে সন্ধান পাওয়া গিয়েছে পাল-সেন যুগের প্রাচীন মন্দিরটির। অনুসন্ধান চালিয়ে মন্দির সংলগ্ন এলাকায় মাটির নিচ থেকে সেই আমলের বহু প্রাচীন মূর্তি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও উদ্ধার হয়েছে।” আগে ছাতুয়া গ্রামের ত্রিপুরাসুন্দরীর আরাধনা হত ত্রিপুরার দেবী ত্রিপুরেশ্বরী আরাধনার রীতি মেনেই। এখন পুজো হয় ব্রাহ্মণ্য মতে। বিগ্রহে রয়েছে চারটি হাত। কিন্তু বিগ্রহের সঙ্গে এই মন্দিরে মহাদেবকে দেখা যায় না। ভৈরব থাকেন পাশেই স্থানীয় বড়াশি গ্রামে। তিনি অম্বুলিঙ্গ শিব।

‘কুব্জিকা তন্ত্র’ অনুযায়ী ত্রিপুরাসুন্দরীর মন্দির ৪২ পীঠের একটি। দেবী এখানে জ্যোতির্ময়ী। সুলতান হুসেন শাহ যখন মসনদে, তখন বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে ভক্তি ও ভাব আন্দোলন। সেই সময় দক্ষিণাঞ্চল অধুনা সুন্দরবনের অধিপতি ছিলেন রামচন্দ্র খাঁ। শাসনকাজ চালানোর পাশাপাশি ছত্রভোগের ত্রিপুরাসুন্দরীর মন্দিরে সেবাইতও ছিলেন তিনি। কথিত আছে, শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু নীলাচলে যাওয়ার পথে ছত্রভোগে এসে ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরে দেবীদর্শন করেছিলেন। মন্দিরে একসময় পাঁঠাবলির রেওয়াজ থাকলেও রামচন্দ্র খাঁ নিষিদ্ধ করেছিলেন বলি প্রথা। জনশ্রুতি, একদিন মন্দিরের সামনে কয়েকজন শিশু খেলতে খেলতে একটি পাঁঠাকে ধরে মন্দিরের কাছে আনতেই পাঁঠার মুণ্ড এবং ধড় নিমেষে আলাদা হয়ে যায়। শাক্ত পণ্ডিতরা নিদান দেন, দেবী ত্রিপুরাসুন্দরী নিজেই বলি চাইছেন। ফের চালু হয় পাঁঠাবলি।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ