Advertisement
Advertisement
Sonarpur

স্টেশনের ওভারব্রিজে পথ শিশুদের নিয়ে বিনি পয়সায় চলে ‘স্বর্ণদ্বীপের পাঠশালা’

১৬জন শিক্ষক-শিক্ষিকা মিলে এখন নিয়ম করে চালান এই পাঠশালা।

free tution run on the station over bridge in Sonarpur
Published by: Subhankar Patra
  • Posted:August 27, 2025 1:40 pm
  • Updated:August 27, 2025 1:40 pm   

দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: করোনার সময়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে। পথে নেমেছিল উপার্জনের তাগিদে। রাস্তায় ভিক্ষা করে অথবা প্লাস্টিক কুড়িয়ে চলছিল সংসার। আগ্রহ ছিল বই নিয়ে বসার, স্কুলে যাওয়ার। সেই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে সোনারপুর স্টেশন ও রেল লাইন সংলগ্ন বস্তি এবং বিদ্যাধরপুরের স্কুলছুট বাচ্চাদের নিয়ে খোলা হয় পাঠশালা।

Advertisement

করোনা পরবর্তী সময়কালে স্কুল খুলে গেলে তাদের মধ্যে অনেকেই ফিরে যায় স্কুলে। কিন্তু প্রাইভেট টিউটর জোগাড় করার সামর্থ্য ছিল না কারওরই। আর তাই সোনারপুর স্টেশন সংলগ্ন বটগাছ তলায় বসেই চলত প্রাইভেট টিউটরের টিউশনি। একেবারে বিনামূল্যেই উদ্যমী যুবকরাই তৈরি করে ফেলেন পাঠশালা। নাম দেওয়া হয় ‘স্বর্ণদ্বীপের পাঠশালা’।

১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা মিলেই এখন নিয়ম করে প্রতিদিন চালান এই পাঠশালা। সোম থেকে শুক্রবার সোনারপুর স্টেশন সংলগ্ন প্ল‌্যাটফর্মের কাছে বটগাছ তলার মন্দিরেই দেখা যায় তাঁদের। সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে ন’টা পর্যন্ত এই পাঠশালায় বাচ্চারা পড়াশোনা করে। সোমবার থেকে শুক্রবার পড়াশোনা হয় নিয়ম করেই। শনি এবং রবিবার চলে বিশেষ পড়াশোনা। বিশেষ করে মনীষীদের জন্মদিন অথবা খেলাধুলা– সব কিছুর জন্য বরাদ্দ এই শনিবার ও রবিবার।

বছর কয়েক আগে সোনারপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের বটগাছ তলার এই জায়গাটি থেকে পড়ানো শুরু করেন স্বর্ণদ্বীপ দাস নামে এক যুবক। প্রথমদিকে জায়গা নিয়ে সমস্যা হলেও পরে পুলিশের সহযোগিতায় ওই জায়গাতেই প্রতিদিন নিয়ম করে বসে পাঠদান করেন তাঁরা।

প্রথমটা স্বর্ণদীপ একা হাতে শুরু করলেও ধীরে ধীরে বন্ধুবান্ধবদেরও তিনি নিয়ে এসেছেন পাঠশালার শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসাবে। শুধু বন্ধু-বান্ধবরা নন, স্থানীয় দু’জন মাকেও তিনি সঙ্গী করেছেন পড়ানোর কাজে।

ছোটখাটো ব্যবসা করেন স্বর্ণদ্বীপ। সারাদিন ব্যবসার পরে সন্ধ্যাবেলাটুকু রেখে দেন বাচ্চাদের জন্য। স্বর্ণদ্বীপের সঙ্গে যে সমস্ত শিক্ষিত যুবক এখানে পড়াতে আসেন  তাঁরা কেউবা মাস্টার্স করা কেউ আবার চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন জোর কদমে।

কিন্তু বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য তাঁদের কোনও সমস্যাই হয় না। নাড়ু, সোহম, কাজল, রাশি, আনন্দ ও মীরা সকলেই তাই মজা করেই পড়তে বসে প্রতিদিন। প্রবল বৃষ্টির জন্য মন্দির চত্বরে বসা সম্ভব না হলে চলে আসেন প্ল্যাটফর্মের ওভার ব্রিজের উপরে। ওভার ব্রিজের আলোতেই চলে পড়াশোনা। কয়েক দিন প্রবল বৃষ্টির কারণেই স্বর্ণদ্বীপের পাঠশালার ঠিকানা এখন তাই সোনারপুর স্টেশনের ওভারব্রিজ। মানুষের চলাফেরার কারণে পড়াশোনায় কিঞ্চিৎ বিঘ্ন ঘটলেও তাতে অভ‌্যস্ত হয়ে গিয়েছে পড়ুয়ারা। স্বর্ণদ্বীপের পাঠশালা থেকে পড়াশোনা করে সম্প্রতি এক পড়ুয়া মাধ‌্যমিকও দিয়েছে।

স্বর্ণদ্বীপ দাস বলেন, ‘‘স্কুলছুট বাচ্চাদের এনে পড়ানোটাই আমার মূল উদ্দেশ্য। বিশেষ করে যারা স্টেশন চত্বর ও বস্তি এলাকার মধ্যেই থাকে। আমরা ১৬ জন বন্ধু মিলে এই কাজ করে চলেছি।  পাঁচ বছর ধরে পড়াচ্ছি। ইতিমধ্যেই ৪৫ জন বাচ্চা আছে আমাদের কাছে। যাদের বেশিরভাগই স্টেশন চত্বরে থাকা শিশু। শুধু পড়াশোনা করানো নয়, সঙ্গে তাদের কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা জামা, প্যান্ট ও ব্যাগের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। সবটাই সাহায্য নিয়ে।’’ স্বর্ণদ্বীপের মতোই দেবাশিস মণ্ডল, সোমা মণ্ডল, স্বপ্না মণ্ডলরা এসে পড়ান এই পাঠশালায়। উদ্দেশ্য একটাই, রাস্তার ও বস্তির শিশুদেরকে পড়াশোনা শিখিয়ে সমাজে মানুষ করে তোলা।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ