শংকর রায়, রায়গঞ্জ: চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু আজও দিনের বেশিরভাগ সময়েই কেঁদে ওঠে মন৷ ছেলের মৃত্যু বলে কথা৷ তাই তো সেই ক্ষত এত তাড়াতাড়ি উপশমের কথাও নয়৷ দাড়িভিট কাণ্ডে নিহত তাপস এবং রাজেশের বাবা-মায়ের অবস্থাও একইরকম৷ চোখে জল ধরে রাখতে পারছেন না তাঁরা৷ তবু দ্বিতীয় দফায় নির্ধারিত দিনে ভোট দিল দুটি পরিবার৷ ছেলেদের মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত হোক, এটাই কামনা তাঁদের৷
ভোট দিয়ে বুথ থেকে বেরিয়ে কেঁদে ফেলেন দাড়িভিট কাণ্ডে নিহত তাপসের মা মঞ্জুদেবী৷ কান্না ভেজা গলায় তিনি বলেন, “গতবার তাপস আমাকে ভোট দিতে এই স্কুলে নিয়ে এসেছিল৷ কিন্তু জীবনে প্রথম ছেলেকে ছাড়া আমাকে ভোট দিতে হল।” চোখের জল মুছতে মুছতে হাত ধরে মাকে বাড়ি নিয়ে যান তাপসের বোন ডলি৷ সে-ও এদিন গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হয়৷ লাইনে দাঁড়িয়ে আঙুলে কালি দিয়ে প্রয়োগ করে ভোটাধিকার৷
অন্যদিকে, নিহত রাজেশ সরকারের বাবা-মাও ভোট দেন দাড়িভিটের সুকানিয়াভিটার স্কুলের বুথে। ভোট দিয়ে ফেরার পথে রাজেশের মা ঝর্ণাদেবীর চোখেও জল৷ তিনি বলেন,‘‘ছেলে আমার কলেজে পড়ত৷ প্রতিবার ভোটের দিন সকালে রাজেশ বাড়ি থেকে বুথে নিয়ে আসতো আমাকে। ঘুম থেকে উঠেও ভেবেছিলাম ও নিয়ে যাবে। তারপরই মনে পড়ল রাজেশের মৃতদেহ যে দোলাঞ্চা নদীর পাড়ে মাটির তলায়। তা ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও ভোট দিলাম৷ নতুন সরকার আসার সে যেন ছেলের মৃত্যুর বিচার পাই।’’ তবে পুত্রসন্তান হারানো বাবা নীলকমল সরকার অবশ্য বলেন,‘‘সিবিআই তদন্তের জন্য এত আন্দোলন করলাম। তবু গুলিতে মৃত্যুর বিচার এখনও হল না। আর কি বিচার হবে? অপরাধীরা সাজা কবে পাবে জানি না।’’
দাড়িভিট কাণ্ডে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালের শয্যা শুয়ে বেশ কয়েকদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হয়েছিল বিপ্লব সরকার নামে আরেক স্কুল ছাত্রকে৷ ছেলে আপাতত সুস্থ৷ তবে আতঙ্কের রেশ এখনও কাটেনি৷ রাজেশের মা সরস্বতীও এদিন দাড়িভিট স্কুলের বুথে ভোট দেন। তবে ভয় যেন এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁকে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.