ছবি: মুকুলেসুর রহমান
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: একটি দুটি নয়, চার বছরের খুদের পেট থেকে বেরোল ২০৩টি কুলের আঁটি। গোটা ঘটনায় অবাক হাসপাতালের চিকিৎসকরা। পেটে ব্যথা নিয়ে ১৪ তারিখে হাসপাতালে এসেছিল ছোট্টো জীবন। হুগলির গোঘাটের বদনগঞ্জ শ্যামবাজার এলাকার বাসিন্দা অজয় রুইদাস ও কল্পনা রুইদাসের ছেলে জীবন বেশ কিছুদিন ধরেই পেটে ব্যথায় ভুগছিল। অনেক জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। তাই শেষপর্যন্ত পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে আসেন ছেলেকে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বুঝতে পেরেই ভরতি করে নেন। শনিবার অস্ত্রোপচারের পরেই বেরিয়ে আসে পেট ব্যথার কারণ। পেট থেকে ২০৩টি কুলের আঁটির পাশাপাশি খেজুরের আঁটি, লোহার বল্টু, বেশ খানিকটা সুতো উদ্ধার হয়েছে। এসবই ছিল ওই একরত্তির পেটে। আর তা থেকেই যন্ত্রণায় কাতারাচ্ছিল জীবন রুইদাস। সফল অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকদের দাবি এতগুলি কুলের আঁটি-সহ হাবিজাবি জিনিসপত্র খেয়ে ফেলা আসলে একটি মানসিক রোগ। রোগটির নাম ট্রাইকোবেজর। শিশুটি এই মানসিক রোগে আক্রান্ত। অস্ত্রোপচারের কিছুদিন পর শিশুকে পুরোপুরি সুস্থ করতে হলে খুব শিগগির মানসিক রোগের একজন বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে নেওয়া জরুরি। নাহলে হয়তো ফের কিছু না কিছু ধাতব বস্তু বা কুলের আঁটি খেয়ে নিতে পারে তাতে বিপত্তি বাধবে বই কমবে না। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে গিয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছেলেকে সুস্থভাবে ফিরে পেয়ে খুশি রুইদাস দম্পতিও।
জানা গিয়েছে, গত একবছর ধরে পেটের যন্ত্রণায় ভুগছিল জীবন। নানা জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েও যন্ত্রণা কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না। উলটে দিন যত যাচ্ছিল তত ফুল উঠছিল জীবনের পেট। লোকমুখে খবর পেয়ে আরামবাগের এক চিকিৎসককে দেখান রুইদাস দম্পতি। তিনি জীবনের অসুস্থতার সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাননি। তবে তাঁর পরামর্শেই ছেলেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন অজয়বাবু। তারপর ১৪ তারিখে শিশু জীবনকে পরীক্ষার পরই চিকিৎসকদের সন্দেহ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভরতি করে নেন। এই প্রসঙ্গে হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপ্যাল (এমএসভিপি) উৎপল দাঁ জানান, ওই শিশুর পেটের ডানদিকে অ্যাপেন্ডিক্সের উপর দিকে ফোলা মত ছিল। জায়গাটা শক্ত হয়েছিল। হাসপাতালের আউটডোরে দেখানোর পর তার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে পেটে যে কুলের আঁটি রয়েছে তা এক্স-রে করেও ধরা পড়েনি। হাসপাতালের বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আট সদস্যের টিম গড়া হয়। এই টিমে ছিলেন আর এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মধুসূদন চট্টোপাধ্যায়। অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক নরেদ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, ক্ষুদ্রান্ত্র যেখানে শেষ ও বৃহদান্ত্রের শুরু সেখানেই জমেছিল কুলের আঁটিগুলি। জায়গাটি সংকীর্ণ হওয়ায় আঁটিগুলি মলের সঙ্গেও বেরিয়ে যেতে পারছিল না। এভাবে বেশিদিন থাকলে সংশ্লিষ্ট অংশে থাকা নালিগুলি বন্ধ হয়ে আরও বড় বিপদের সম্ভাবনা ছিল। বিষয়টি জটিল হয়ে গেলে জীবনহানির আশঙ্কা একটা থেকেই যেত। শিশুটির পেটে যে কুলের আঁটি রয়েছে তা প্রথমে বোঝা যায়নি। অস্ত্রোপচারের পরেই সবকিছু প্রকাশ্যে এল।
কুলের আঁটি কীভাবে জীবনের পেটে এল?
উৎপলবাবু জানাচ্ছেন, এ এক ধরনের মানসিক রোগ। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ প্রসেনজিৎ রায় বলেন, “এই রোগকে ট্রাইকোবেজর (tricobezor) বলা হয়। শিশু বয়স্ক যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। একবার রোগ দেখা দিলে খাবারের ক্ষেত্রে কোনও বাছবিচার থাকে না। কেউ চুল খেয়ে নেয়, কেউ বা মাটি খায়, আরও অন্যকিছু খেয়ে নেওয়ার প্রবণতা থাকে। তার ফলে সেগুলি পেটে গিয়ে জমাট বেঁধে যায়। অস্ত্রোপচার করে বের করা জরুরি হয়ে পড়ে। অস্ত্রোপচারের পর রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল হলে অবশ্যই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.