Advertisement
Advertisement
Purulia

অবরোধের প্রস্তুতি কুড়মিদের, হাই কোর্টের নির্দেশে ‘অ্যাকশন’ পুলিশের, পুরুলিয়ায় আটক ৬০

আদালতের রায় নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার বিতর্কে মূল মানতা।

District police takes action to combat Kurmi protest at Junglemahal mainly in Purulia

কুড়মিদের অবরোধ রুখতে ইন্টার স্টেট নাকা চেকিং পুরুলিয়ার ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন এলাকায়। নিজস্ব ছবি।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 20, 2025 12:06 am
  • Updated:September 20, 2025 12:38 am   

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রাত পোহালেই অনির্দিষ্টকালীন কুড়মি অবরোধ। কিন্তু কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে তা অসাংবিধানিক ও বেআইনি। কুড়মিরা অঙ্গীকারবদ্ধ, মৌলিক অধিকারের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। এদিকে রাজ্য পুলিশও জানিয়ে দিয়েছে, আদালতের নির্দেশ পালনে সর্বশক্তি দিয়ে অবরোধ রুখতে নামবে তারা। ফলে শুক্রবার থেকে জঙ্গলমহলে যুদ্ধের আবহ! বিশেষ করে পুরুলিয়ায়। আর মধ্যরাত ঘনাতেই ‘অ্যাকশন’ শুরু হয়ে গেল পুরুলিয়া জেলা পুলিশের। জঙ্গলমহলের এই জেলায় বিভিন্ন স্টেশনে শনিবার সকাল ৬ টা থেকে অবরোধের জন্য শুক্রবার রাত থেকেই কুড়মি সমর্থকরা জড়ো হতে শুরু করেন। এই জমায়েত ভাঙতে একের পর এক সমর্থককে আটক করে পুলিশ। বেশি রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, জেলাজুড়ে প্রায় ৬০ জন কুড়মি সমর্থক আটক হয়েছেন।

Advertisement
District police takes action to combat Kurmi protest at Junglemahal mainly in Purulia
২০২৩ সালে কুড়মিদের রেল অবরোধের
মূল স্থল ছিল এই কুস্তাউর স্টেশন। শুক্রবার রাতে টহলদারি। নিজস্ব ছবি।

বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্ট আদিবাসী কুড়মি সমাজের রেল ও সড়ক অবরোধ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বরের রায়কে বহাল রেখে জানিয়ে দিয়েছিল, ওই কর্মসূচি অসাংবিধানিক। এই রায়ের পর ফোন বন্ধ করে ঝাড়খণ্ড চলে যান আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা)অজিতপ্রসাদ মাহাতো। শুক্রবার সকাল হতেই তিনি একটি ভিডিও বার্তায় আদালতের রায় নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়ার বেলগুমা পুলিশ লাইন থেকে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও জেলাশাসক রজত নন্দা হাই কোর্টের রায়কে সামনে রেখে যে বার্তা দেন, মূলত তার বিরোধিতা করে উচ্চ আদালতের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ান বলে অভিযোগ। আর তারপরেই পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বেলার দিকে সাংবাদিক সম্মেলন করে ওই বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের পালটা দেন। এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম বলেন, “এর আগেও ২০২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এই আদেশ দিয়েছিল। ২০২৪ সালে বাংলায় রেল অবরোধ কর্মসূচি আয়োজন করতে পারেনি আদিবাসী কুড়মি সমাজ। ফের ২০২৫ সালে তারা আগামী ২০ সেপ্টেম্বর এই পদক্ষেপ নিতে চলায় আদালতে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ বহাল রেখেছে আদালত।”

অবরোধ কর্মসূচির প্রাক্কালে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো হাই কোর্টের রায় নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার করে বিতর্কে জড়িয়ে যান। পুরুলিয়া আদালতের সরকারি আইনজীবী বিশ্বরূপ পট্টনায়কও আদালতের ওই রায়কে সামনে এনে এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করেন। মূল মানতাকে খোঁচা দিয়ে তিনি জানান, “উনি বোধহয় শব্দের অর্থ বুঝতে পারছেন না।” এদিন সকাল দিকে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা ভিডিও বার্তা দিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালালেও তাঁকে দিনভর ফোনে পাওয়া যায়নি। তাঁর দুটি মোবাইলই সুইচড অফ ছিলো। তবে তাদের গ্রুপে বার্তা দেওয়া হয়েছে, বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী এলাকার যে কোনও একটি স্টেশনে তিনি থাকবেন। যেমন যেমন গ্রুপে বার্তা দেওয়া হবে তেমন কাজ করার নির্দেশ রয়েছে। কুড়মি সমাজ সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলমহল, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা মিলিয়ে একাধিক স্টেশনে ১০ থেকে ২০ জন জড়ো হয়ে যে কোনও ট্রেন আটকে দেওয়ার ছক করেছেন। যাতে তাঁরা আন্দোলনটি সফল করতে পারেন। এদিন বেশি রাতের খবর অনুযায়ী, বাঘমুন্ডির সুইসা ও ঝালদা দু’নম্বর ব্লকের বেগুনকোদর স্টেশন এলাকায় তাঁরা অবরোধ করে ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে চান। সেই কারণে ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত স্টেশনগুলিকে বেছে নিচ্ছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন ঝাড়খণ্ডের সনুয়া।

এদিকে, হাই কোর্টের রায় যাতে যথাযথভাবে পালন করা যায়, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সমস্যা না হয়, তাই পুরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রামে সকাল থেকে এদিন রুট মার্চ করে পুলিশ। চলে এরিয়া ডমিনেশন। এদিকে এদিন রাতেই আদিবাসী কুড়মি সমাজ যেসব এলাকায় রেল ও সড়ক অবরোধ করবে বলে খবর মিলেছে, সেখানেই রেল ও রাজ্য পুলিশ মোতায়েন হয়ে যায়।

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরুলিয়ার গ্রামে গ্রামে পুলিশের রুট মার্চ। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

এদিন পুরুলিয়া শহরের মানুষজন মধ্যপল্লী এলাকা থেকে মিছিল করে শহরের দুলমি এলাকায় মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতোর বাড়ির সামনে প্রতিবাদ সভা করেন। ওই সভা থেকে অবরোধ কর্মসূচির যেমন নিন্দা করা হয়। তেমনই এক কুড়মি সমর্থক শহরের এক দুর্গা পুজো মণ্ডপকে ঘিরে সমাজ মাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য করায় ওই প্রতিবাদ সভা থেকে ধিক্কার জানানো হয়। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সমাজমাধ্যমের দিকেও নজর রাখছি। বিধি বহির্ভূত কোনও কিছু নজরে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ঝাড়খণ্ড থেকে এখানে এসে যাতে কেউ অশান্তি না পাকাতে পারে, তাই ইন্টার স্টেট নাকা চলছে। এই পরিস্থিতিকে ঘিরে কোথাও যাতে কোনরকম সংঘাত না বাঁধে সেই দিকে আমাদের তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে।”

এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিমের কথায়, “আদালতের নির্দেশ মেনে জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পদস্থ কর্তারা দেখভালের দায়িত্বে আছেন। করা হয়েছে পুলিশ পিকেটের ব্যবস্থা। রেলকে বলা হয়েছে উপযুক্ত সংখ্যক আরপিএফ মজুত রাখতে। যাতে কোন ভাবেই রেলের সম্পত্তি নষ্ট না হয়।” তিনি আদিবাসী কুড়মি সমাজের উদ্দেশে বলেন, “কোনওভাবেই আদালতের নির্দেশ অমান্য করবেন না। তেমনটা হলে পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।” তিনি আরও বলেন, “রবিবার মহালয়া। মহালয়া থেকেই দুর্গোৎসব শুরু হয়ে যায়। এসময় রেলের ওপর ভরসা করে থাকেন প্রচুর মানুষ। অনেকে চিকিৎসার জন্য দক্ষিণে যান। ছাত্ররা যান পড়তে। সেখান থেকে পুজোর সময় বাড়ি ফেরেন। পুজোর মুখে রেল অবরোধ তাদের সকলকে চরম সমস্যায় ফেলতে পারে। ফলে তেমন কোন পদক্ষেপ প্রশাসন মেনে নেবে না। বিক্ষোভকারীরা যাতে একসঙ্গে বেশি মাত্রায় জড়ো হতে না পারেন। তাও নিশ্চিত করবে পুলিশ।” ফলে সবে মিলিয়ে সময় যত এগোচ্ছে, চাপা উত্তেজনা বাড়ছে জঙ্গলমহলে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ