সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: ২০১১-এ রাজ্যের রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে রাজ্যের সিপিএম পার্টি অফিসগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল৷ কিন্তু এবছর লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে সেই দৃশ্যে বদল৷ রাজ্যজুড়ে বিয়াল্লিশের মধ্যে শূন্য পাওয়ার পরও খুলে যাচ্ছে সিপিএমের তালাবন্ধ দলীয় কার্যালয়গুলো৷ দুর্গাপুর এলাকায় জং ধরা তালা খুলে ফের সচল হচ্ছে সিপিএমের কার্যালয়।
কিন্তু কোন জাদুতে? আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই তৎপরতা দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে জুড়ে। কখনও রাজনৈতিক হিংসা, আবার কখনও শাসকদলের আগ্রাসী ভূমিকায় বন্ধ হয়েছিল বামেদের পার্টি অফিস। পালাবদলের পর বহু কার্যালয় কর্মীর অভাবেও বন্ধ হয়ে যায়।দীর্ঘ ৮ বছর ধরে বন্ধ থাকায় ভেঙে পড়ছিল বেশ কিছু কার্যালয়। কিছু কার্যালয়ে আগাছা জঙ্গলের চেহারা নেয়। দলীয় সূত্রেই জানা গেছে, ২০১১ সালের পর থেকে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় আঞ্চলিক কিংবা সেক্টর বা গ্রামীণ কার্যালয় মিলিয়ে মোট ৩২টি কার্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। ভঙ্গুর সংগঠনও যেমন এর জন্য দায়ী, তেমনই আঞ্চলিক পার্টি অফিসেও সদস্যরা নিয়মিত যাতায়ত করকে অনীহা প্রকাশ করায় ‘দেনা’র দায়েও বন্ধ হয়েছে বেশ কিছু।
ভাড়া চালু রেখে পার্টি অফিস টিকিয়ে রাখার মতো উদাহরণ দেখা গেছে পূর্ব বর্ধমান জেলায়। সেই দুর্দিনের পরিবর্তন দেখা দিয়েছে এই লোকসভা ভোটের ফলাফলের পরই। ফলাফলে দলের আসন সংখ্যায় সুদিন তো ফেরেইনি, বরং একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। কিন্তু রাজ্যে একটি আসন না মিললেও কিংবা ১ জন বাদে সব বাম প্রার্থীর জামানত জব্দ হলেও হারিয়ে যাওয়া পার্টি অফিসগুলি খুলতে শুরু করেছে। এই জেলায় আসানসোল কিংবা বর্ধমান–দুর্গাপুর লোকসভার একাংশে সিপিএমের ভরাডুবি হয়েছে। দুই ক্ষেত্রেই বাম প্রার্থীর জামানত শুধু বাজেয়াপ্তই হয়নি, প্রাপ্ত ভোটও আগের থেকে বহুলাংশে কমে তা গিয়েছে গেরুয়া ধাক্কায়। আর তারই পাল্টা ‘পুরস্কার’ হিসাবে একসময়ের দলীয় কার্যালয়গুলিকে ফের সাফসুতরো করে খুলতে মদত করছে বিজেপি? এই প্রশ্নই উঠছে৷
২৩ মে’র পর পনেরো দিনের মধ্যে এই জেলায় বামেদের ৩টি দলীয় কার্যালয় বন্ধ দরজার তালা খুলেছে৷ তবে যে তিনটি পার্টি অফিস এখনও পর্যন্ত খোলা হয়েছে, সেই তিনটি কার্যালয়ই আসানসোল লোকসভার অন্তর্গত। যেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় প্রায় দু’লক্ষের বেশি ভোটে জয়লাভ করেছে। রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের গোগলা ও কালীগঞ্জে বেশ ধুমধাম করেই দলীয় কার্যালয় ‘পুর্নদখল’ করে সিপিএম। এই ঘটনা ফের একবার এই নির্বাচনে রাম–বাম জোট প্রকাশ্যে আনল বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের৷
যদিও সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার জানান, ‘নির্বাচনের পর তৃণমূল বুঝেছে, মানুষ তাঁদের গ্রহণ করছে না। পূর্বের অপরাধ নিয়েও তারা দোলাচলে। বিনা বাধায় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানে খোলা হল কার্যালয়।’ আরেকদিকে সিপিএমকে ‘সাহায্য’ করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষণ ঘোড়ই৷ তাঁর কথায়, ‘সিপিএম আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তাদের কোনওক্ষেত্রেই জমি ছাড়ার প্রশ্নই নেই।’
ছবি: উদয়ন গুহরায়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.