জলমগ্ন ঘাটালে থমকে মণ্ডপ তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র
শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: মায়ের গজে আগমন। দোলায় গমন। কিন্তু হাতি চলাচলের যোগ্য বা দোলা বহনের হাল, কোনওটাই যে নেই ঘাটালে। মণ্ডপের সামনে হাঁটু জল। কোথাও মণ্ডপের বাঁশ ফেলাই দায়। সন্তানদের আকুতি, আর বৃষ্টি নয়, রক্ষে করো মা।
প্রায় দু’মাস জলবন্দি ঘাটাল। মণ্ডপের স্থানই জলমগ্ন। কোথাও হাঁটু জল তো কোথাও আবার কোমর সমান। গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে ফের জল বইছে ঘাটাল পুর এলাকায়। কোথাও মণ্ডপ শুরু করেও আপাতত স্থগিত সেই কাজ। কোথাও আবার শুরুই করা যায়নি মণ্ডপের কাজ। কোনও কোনও উদ্যোক্তারা আবার মনে করছেন মণ্ডপের স্থান বদল করতে। তাঁদের যুক্তি, সবে আগস্টের শেষের দিক। এখনও সেপ্টেম্বর মাস শুরুই হয়নি। আসল বৃষ্টি তো হয় সেপ্টেম্বর মাসেই। বড় বন্যা তো এই মাসেই হয়। পুজো নিয়ে কী করবেন তা স্থির করে উঠতে পারেননি অনেক উদ্যোক্তাই।
ঘাটালের ১২টি ওয়ার্ডই জলমগ্ন। ফলে মণ্ডপ তৈরির ঝুঁকি নিতে চাইছে না অনেকেই। সমস্যার কথা মানছেন ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান তুহিনকান্তি বেরা। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় দু’মাস তো ঘাটালের ১২টি ওয়ার্ড জলমগ্ন। বেশিরভাগ পুজো মণ্ডপের স্থান জলের তলায়। কোন সাহসে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু করবেন? পুরসভার চাউলি, সিংহপুর, রামচন্দ্রপুর, শুকচন্দ্রপুর, আড়গোড়া, নিশ্চিন্দিপুর, গম্ভীরনগর সব ওয়ার্ডই জলমগ্ন। যারা ঝুঁকি নিয়ে মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন, তাঁরাও কাজ স্থগিত করে দিয়েছেন। এখনও সেপ্টেম্বর মাস বাকি। মণ্ডপ তৈরির কাজের ঝুঁকি নেবেন কোন সাহসে? জানি না আদৌ সাড়ম্বরে পুজো করতে পারবেন কি না শহরবাসী। আমরাও বেশ উদ্বিগ্ন।’’
কথা হচ্ছিল পুরসভার ছয় নম্বর ওয়ার্ডের চাউলি-সিংহপুর সর্বজনীন পুজো কমিটির সভাপতি প্রদীপ জানা ও সম্পাদক শুভেন্দু মুলার সঙ্গে। মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু করেও স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। পুজো কমিটির দুই কর্তাই জানালেন, ‘‘এবছর আমাদের পুজো ১৭ বছরে পড়ল। জল নেমে যেতেই আমরা মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম। শনিবার পর্যন্ত কাজ হয়েছে মণ্ডপের। বৃষ্টিতে রবিবার মণ্ডপের ভিতর হাঁটু সমান জল। এতে কাজ স্থগিত করা ছাড়া উপায় কী? বাধ্য হয়ে মণ্ডপশিল্পীকে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। জল কমলেই ফের প্যান্ডেল তৈরির কাজ শুরু হবে।’’ আদৌ কি জল কমবে পুজোর সময়ও? তা নিয়েই মাথাব্যথা শুরু হয়েছে রামচন্দ্রপুর, আড়গোড়া, শুকচন্দ্রপুর, নিশ্চিন্দিপুর প্রভৃতি ঘাটালের নামকরা পুজো উদ্যোক্তাদের। ফলে ঝুঁকি নেবে কে?
একই পরিস্থিতি ঘাটাল ব্লকের গ্রামীণ এলাকায়ও। তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে ঘাটাল ব্লকের অজবনগর এক ও দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সবক’টি মৌজাই জলমগ্ন। অন্যান্য গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আগে থেকেই মাঠ, ময়দান জলের তলায়। গ্রামের পুজো উদ্যোক্তারাও মণ্ডপ তৈরির ঝুঁকি নিতে চাইছেন না বলে জানিয়েছেন ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বিকাশ কর। তিনি বলেন, ‘‘এই তিনদিনের বৃষ্টিতে যে এলাকাগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বা জলমগ্ন হয়নি, কোথাও মণ্ডপের কাজ শুরু করতে দেখা যায়নি। আমি কয়েকটি উদে্যাক্তার সঙ্গে কথা বলে জেনেছি তঁারা কেউই মণ্ডপ তৈরির কাজে ঝুঁকি নিতে চাননি। কারণ, জল কমতে না কমতেই ফের বৃষ্টি, ফের একই অবস্থা। দু’মাস ধরে তো ঘাটালের এই চিত্র। তাহলে কোন সাহসে প্রচুর টাকা খরচ করে মণ্ডপ তৈরির ঝুঁকি নেবেন?’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.