Advertisement
Advertisement

পড়াশোনা চালাতে ফিনাইল তৈরি, ভাগ্যের চাবিকাঠি দৃষ্টিহীনদের নিজেদেরই হাতে

অপেক্ষা করেও মেলেনি সরকারি সাহায্য।

Blind students make phenyl to study
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 19, 2019 9:04 pm
  • Updated:February 19, 2019 9:04 pm  

সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: ১৮ বছরের অপেক্ষা বিফলে গিয়েছে। এতটুকুও সরকারি সাহায্য মেলেনি শিলিগুড়ির ভীমভার স্নেহাশ্রম দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ের। প্রায় বাধ্য হয়েই নিজেদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে স্বনির্ভর হয়েছেন স্কুলের ৪০ জন দৃষ্টিহীন পড়ুয়া। নিজেরাই তৈরি করছেন ফিনাইল। ঘুরে ঘুরে তা বিক্রির মাধ্যমে চেষ্টা করছেন, পড়ার খরচটা যাতে হাতে আসে।

Advertisement

পড়াশোনা করার অদম্য ইচ্ছা। সেই লক্ষ্যেই কষ্ট করে বিদ্যালয় তৈরি। শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়া ব্লকের ভীমভার এলাকায় ২০০০ সালে একটি দানের জমিতে নিজেদের সংগৃহীত অর্থ দিয়ে আবাসন গড়ে তুলেছিলেন এক দৃষ্টিহীন বাসিন্দা আশিস দাস। নাম দেওয়া হয়েছিল – ভীমভার স্নেহাশ্রম দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়। প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হলেও, পরবর্তীতে আবাসিকদের পড়াশোনার ভারও নেওয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পাঠ দিয়ে তাঁদের পরবর্তী সময়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয় ভীমভার স্নেহাশ্রমের তরফে। ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে এই মুহূর্তে এখানকার আবাসিক সংখ্যা প্রায় ৪০। এরা সবাই দৃষ্টিহীন।

ছেলেধরা সন্দেহে গণপ্রহার অব্যাহত, দিনভর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি

সরকারি সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করে করে কেটে গেছে ১৮টা বছর। আগে বেসরকারি সাহায্য থাকলেও, বর্তমানে তারাও পিছিয়ে গিয়েছে। ৪০ জন আবাসিকের ভবিষ্যত তাই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গিয়েছে। কিন্তু সমাধানের উপায় বের করেছেন তাঁরা নিজেরাই। রোজের খরচ তুলতে নেমেছেন কাজে। বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরে শেখা ফর্মুলা দিয়ে তৈরি করেছেন ফিনাইল। ঘুরে ঘুরে আশপাশের এলাকায় বিক্রি করছেন তাঁরা। এভাবেই স্বনির্ভরতার পাঠ শিখে রোজকার লড়াই চালানোর চেষ্টা করছেন ছাত্রছাত্রীরা। পাশে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষকরাও।

phenyl blind 

চেন্নাই যাওয়ার পথে সাঁতরাগাছি থেকে ধৃত আরও এক জেএমবি জঙ্গি

বিষয়টি নিয়ে সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সদস্য তথা ফাঁসিদেওয়া–১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি আইনুল হক। তিনি বলেন, “ওই আবাসিক স্কুলটি দুর্দশার মধ্যে আছে শুনেছি। তবে দুর্দশা এতটা ভয়াবহ, তা জানা ছিল না। সরাসরি আমার কাছে সাহায্যের কোনও প্রস্তাব আসেনি। তবে চেষ্টা করব, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কিংবা ব্যক্তিগত যে কোনওভাবে সাহায্য করার।” সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চান শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপস সরকারও। স্কুলের তত্ত্বাবধায়ক তথা প্রতিষ্ঠাতা আশিস দাসের কথায়, “একে তো নিজেদের খরচ কিছুটা লাঘব হচ্ছে এই স্বনির্ভর উদ্যোগে। সেইসঙ্গে পরবর্তীতে এখানকার ছেলেমেয়েরা যদি চায়, কিছু কাজ করে অন্তত নিজেদের খরচ জোগাতে পারবে। তাই দু’দিক চিন্তা করেই এই উদ্যোগ নিয়েছি। ইচ্ছে আছে ধূপকাঠি, সাবান ও ডিটারজেন্টও তৈরি করা শেখানোর। চেষ্টা চালিয়ে যাই, বাকিটা আমাদের হাতে নেই।” এসব দেখেশুনে অনেকেই সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আপাতত ভীমভার, বিধাননগর এবং ফাঁসিদেওয়া বাজারের দোকানগুলিতে তাঁদের তৈরি ফিনাইল বিক্রি করা হচ্ছে। সব দোকানদারই দৃষ্টিহীনদের তৈরি ফিনাইল বিক্রির জন্য রাখছে। এভাবেই হয়তো এঁদের ছোট উদ্যোগ একদিন বড়সড় সাফল্যের মুখ দেখবে। তারই প্রতীক্ষায় সকলে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement