ফাইল ছবি
অর্ণব দাস, বারাকপুর: বারাকপুর ওয়ারলেস মোড় সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচীর তাণ্ডবের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল মোহনপুর থানায়। এনিয়ে শুক্রবার বেলা ১১টায় বিজেপির আইনজীবী নেতাকে থানায় তলব করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত নোটিস কৌস্তভকে দেওয়া হয়েছে বলেই খবর। এদিনই ওই বেসরকারি হাসপাতালে যায় প্রগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ইউনিটের চার চিকিৎসক প্রতিনিধি। তাঁরাও ঘটনার প্রতিবাদে সরব।
নাম না করে বিজেপি নেতা কৌস্তভকে আক্রমণ করে প্রতিনিধি ডাঃ বিবর্তন সাহা বলেন, “চিকিৎসক দিবসের দিন অত্যন্ত অনভিপ্রেত ঘটনাটি ঘটেছে। সেদিন যার মৃত্যু হয়েছে তার ট্রিটমেন্ট ডিটেলস আমরা শুনলাম। হাসপাতাল সর্বোত্তম প্রচেষ্টা করেছে বলে আমরা মনে করি। পরবর্তীতে এমন একজন যিনি চিকিৎসা চলাকালীন ছিলেন না, তিনি এসে যেভাবে ভয় দেখিয়েছে, থ্রেট করে অসংসদীয় ভাষা প্রয়োগ করেছে। এটি অত্যন্ত নেগেটিভ বার্তা বহন করেছে। আমরা এই ভিজিটের পর লিখিতভাবে মন্ত্রী শশী পাঁজা ও সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে রিপোর্ট জানাবো।” আরেক প্রতিনিধি ডাঃ সুমিত সাহা জানিয়েছেন, “কোন চিকিৎসক জ্ঞানত চিকিৎসায় গাফিলতি করেন না। ওই রোগী ভর্তি হওয়ার পরপরই হাসপাতাল চিকিৎসা শুরু করেছিল। চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। যদি চিকিৎসায় কোন ত্রুটি হয় তার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। পরিবারের তরফে সেখানে অভিযোগ জানানো যেত। কিন্তু সেটা না করে কিছু মানুষ আইন ভেঙে মারমুখী মেজাজে তাণ্ডব চালিয়েছে। এরফলে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অন্যান্য রোগীরাও অসুবিধা সম্মুখীন হয়েছেন। এই ঘটনা একটি লজ্জার দৃষ্টান্ত।”
প্রসঙ্গত, বারাকপুরের বাসিন্দা এক বিজেপি কর্মীর বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে বারাকপুর বিএন বসু মহকুমা হাসপাতাল, পরে কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার বারাকপুর ওয়ারলেস মোড় সংলগ্ন ওই মাল্টি স্পেশালিটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বছর পয়ষত্তির ব্যক্তির মৃত্যু হলে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। রাতে হাসপাতালে পৌঁছান বিজেপি নেতা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী। তাঁর আঙুল উঁচিয়ে চিকিৎসকদের হুমকি, শাসানোর অভিযোগের সেই ঘটনা ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ভাইরাল। এনিয়ে বিজেপি নেতা ও মৃতের পরিবার অভিযোগ তোলে, রোগীর চিকিৎসা করানোর বদলে কত টাকার প্যাকেজে ভর্তি করা হবে তা নিয়ে দর কষাকষি করছিল হাসপাতাল কতৃপক্ষ। এমন অবস্থায় হাসপাতালের উপস্থিত স্বাস্থ্য কর্মীদের কেউ অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে শ্বাসকষ্টে রোগীর মৃত্যু হয় বলেই অভিযোগ তোলেন তারা।
যদিও অভিযোগ উড়িয়ে এদিন হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিশ্বজিৎ রায় বলেন, “পরিষেবা দিতে গিয়ে বিগত তিরিশ বছরের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি। রোগীর পরিবার যদি অভিযোগ জানাত তাহলে ময়নাতদন্ত হয়েই জানা যেত অক্সিজেনের অভাবের কারনে মৃত্যু হয়েছে কি না। দুটি হাসপাতাল রেফার হয়ে আমাদের এখানে রোগী আসে। চিকিৎসা শুরু হলে জানা যায় রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ইমারজেন্সিতে সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রোগীকে সিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছিল।” হাসপাতালের তরফে মোহনপুর থানায় এনিয়ে অভিযোগ জানানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে তলব করা হয়েছে কৌস্তভকে। এনিয়ে তিনি জানিয়েছেন, “এইরকম নোটিস আমার কাছে অনেক এসেছে। আমি জানি কিভাবে এর মোকাবেলা করতে হয়। সরকার এসব করে কোনোভাবেই আমাকে বিচলিত করতে পারবে না। যাবো কি না ঠিক করিনি। আইনগত ভাবে এর মোকাবিলা করব।” সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, “রোগীর পরিবার অভিযোগ করেছিল। ময়নাতদন্তের জন্য কাউন্সিলরের চিঠি পর্যন্ত আনা হয়েছে। পরে পুলিশ ভয় দেখিয়ে জোড়পূর্বক অভিযোগ প্রত্যাহার করিয়েছে। এনিয়ে আইনগত যা যা করণীয় আছে, করা হবে।” পাল্টা ঘটনা প্রসঙ্গে বারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিকের মত, “অ্যাঞ্জিওগ্রাম করার জন্য পরিবারের কাছে বন্ড চাওয়া হলে তারা আলাপ আলোচনা করতে গিয়ে দেরি করে ফেলে। এই কারণেই অপারেশন টেবিলের রোগীকে নিয়ে যাওয়ার সময় হার্ট ফেলিওর হয়ে মৃত্যু হয়। রোগীর পরিবার এনিয়ে কিছু বলল না। কোন এক ব্যক্তি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বাইরে থেকে এসে চিকিৎসকের নামে কুৎসিত গালিগালাজ, হেনস্তা করল। চিকিৎসকরা যাতে নিরাপদে কাজ করতে পারে পুলিশ প্রশাসন নিশ্চয়ই এরজন্য ব্যবস্থা নেবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.