প্রতীকী ছবি।
শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: প্রেমিকার মোবাইলে নিজের নাম ব্লক করে রাখার অপমান সইতে না পেরে আত্মঘাতী এক কলেজছাত্র। লিখে রেখে যায় আত্মহত্যার আগে প্রেমিকার উদ্দেশ্যে শেষ বয়ান, ‘আমার প্রিয় ভালোবাসা, তোমার ভালোবাসায় কোন দাগ রাখেনি। আগে আমি তোমাকে ব্লক রাখতাম। আর এখন আমাকে তুমি ফোনে ব্লক করে রেখেছে। খুব কষ্ট হচ্ছে, ইতি তোমার শেষ ভালোবাসা।’ বুধবার বাড়ির শোওয়ার ঘর থেকে গলায় গামছা জড়ানো এক ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেইসঙ্গে দেহের পাশ থেকে ডটপেনে লেখা একটি সুইসাইড চিঠি উদ্ধার করা হয়। এদিন সকাল ন’টা নাগাদ উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের সীমান্তবর্তী বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েতের ভানুইল গ্রামের ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা।
মৃত বছর উনিশের সজল বর্মন, কালিয়াগঞ্জ কলেজের ছাত্র। কয়েকদিন আগেই স্নাতকের প্রথম বর্ষের সেমিস্টারের পরীক্ষা দিয়েছিল। যদিও এখনও ফল প্রকাশ হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পবিত্র বর্মন জানান। এদিকে পরিবারের প্রথম কলেজ পড়ুয়া কনিষ্ঠ পুত্রকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন পেশায় কৃষক বাবা তপনকুমার বর্মন। এদিন খাঁখাঁ রোদে বাড়ির দাওয়ায় বসে কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ বাবা বলেন, “এভাবে ছেলে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেল। ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতাম। পড়াশোনার কোন অভাব বুঝতে দিতাম না। এখন আমরা কিভাবে বাঁচব।” স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, গ্রামের হাই স্কুলে পড়াশোনার সময় গ্রামের এক ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় থেকে প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সজলের।
গত বছর একসঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সময়ই মূলত পরস্পরের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। দু’জনই উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছিল। তারপর সজল কালিয়াগঞ্জ কলেজে স্নাতকের কলা বিভাগে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিল। ওই কিন্তু গ্রামের সহপাঠী বান্ধবীর পারিবারিক কারণে আর কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু তাতে অবশ্য পরস্পরের ভালোবাসার সম্পর্কে কখনও কোন বাধা হয়ে দাঁড়াননি। বরং বন্ধুত্বের গাঢ় বন্ধনে প্রেম প্রণয়ের সম্পর্ক আরও তীব্র হয়।
কিন্তু চলতি বছরের গোড়ার দিকে ওই তরুণীর সঙ্গে অন্য এক যুবকের বিবাহের পাকা দেখা চূড়ান্ত করে পরিবার। মূলত তারপরই স্কুলের সহপাঠী সজলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে তার ফোন নম্বর ব্লকড করে দেয় বলে অভিযোগ। ফোনে ইতিপূর্বে অনেকবার সেই বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোন কাজ হয়নি। এরপরই মনের কোণে তীব্র হতাশা বাসা বাধতে শুরু করে সজলের। পরিবার সূত্রে জানা যায়, দিন কয়েক ধরে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়ায় করছিল না সজল। শেষপর্যন্ত এদিন শেষ পরিণতি ঘটে।
বুধবার হেমতাবাদ থানার আইসি সুজিত লামা অবশ্য বলেন, “একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সেইসঙ্গে মৃতদেহের ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুইসাইড নোটের হাতের লেখা আদৌ ওই ছাত্রের কিনা,সেটাও পরীক্ষা করা হবে।” যদিও সংশ্লিষ্ট থানা সূত্রে দাবি, পরিবারের তরফে সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোন মহিলার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ জমা পড়েনি।” তবে মৃতের পরিবারের তরফে প্রেমিকার নাম উল্লেখ করা হয়নি। যদিও গ্রামবাসীসের একাংশের দাবি, মৃত্যুর খবর জানাজানির পরই প্রেমিকা বাড়ি থেকে বেপাত্তা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.