Advertisement
Advertisement
Murarai

দিল্লিতে কর্মসূত্রে মুরারইয়ের আড়াই হাজার পরিযায়ী, বাংলাদেশি সন্দেহে পুশব্যাক আতঙ্ক বাড়ছে

দীর্ঘ সময় ধরে দিল্লিতে কাজের জন্য রয়েছেন শ্রমিকরা।

2,500 migrant workers from Murarai stranded in Delhi due to work
Published by: Suhrid Das
  • Posted:July 9, 2025 10:24 am
  • Updated:July 9, 2025 10:24 am  

হাবিব তানভীর, রামপুরহাট: দিল্লিতে বাংলায় কথা বললেই দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশি! বীরভূমের পাইকরের দুই শ্রমিক পরিবারকে বাংলাদেশে পুশব‌্যাকের পর রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে। দিল্লির রোহিণী এলাকার বীরভূমের প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক রয়েছেন। ওই শ্রমিকরা এখন উদ্বেগে রয়েছেন। মুরারইয়ের ১ ও ২ ব্লকের অনেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁরা দিল্লিতে গিয়ে কাজ করেন। মূলত পুরুষরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাফাইয়ের কাজ করেন। তার ভিত্তিতে কিছু টাকা পান। আর ওই আবর্জনা থেকে প্রাপ্ত প্লাস্টিক, অন্যান্য দ্রব‌্য নিজেরা আলাদা করে বিক্রি করেন। আর মহিলারা পরিচারিকার করেন। পাইকরের সাবির খান ফোনে বলেন, ‘‘দীর্ঘ ১০ বছর কাজ করছি দিল্লিতে। কখনও ভয় পাইনি। এখন বেশি হয়রানি করা হচ্ছে।’’ আরেক শ্রমিক নূরে খোদা বলেন, ‘‘এখানে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে কাজ করছি। বাংলা ভাষা বললেই সমস্যা।’’

Advertisement

পাইকরের নুর আলমও বর্তমানে দিল্লির রোহিণীতে থাকেন। তিনি বলেন, “চোখের সামনে একে একে তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আমরা ভয়ে দিন গুনছি। কাজ করতে গিয়ে এভাবে হয়রানির মধ্যে পড়ব ভাবিনি।’’ শ্রমিকদের অভিযোগ, অনেককে পুলিশ টাকা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। আর টাকা না দিলে আধার, ভোটার কার্ড দেখালেও পুলিশ ঝামেলা করছে। বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ জীবিকার তাগিদে দেশের নানা প্রান্তে পাড়ি দেন। কিন্তু সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের ছয় বাসিন্দাকে বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিয়ে দিল্লি ও গুজরাটে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার জেরে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে বীরভূম জুড়ে। রামপুরহাট মহকুমার মুরারই ১ ও ২ ব্লক থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক দেশের অন্যান্য রাজ্যে কাজ করতে যান।

সেই সব শ্রমিকদের মধ্যেই এখন আতঙ্ক ‘বাংলাদেশি’ অপবাদে বন্দি না হয়ে পড়েন! ঘটনার সূত্রপাত, পহেলগাঁও হামলার পর থেকে বাংলাদেশ থেকে বেআইনিভাবে আসা মানুষের বিরুদ্ধে তল্লাশি অভিযানে নেমেছে বেশ কিছু বিজেপিশাসিত রাজ্য। অভিযোগ, সেই অভিযানের সুযোগ নিয়ে বাংলাভাষী অনেক পরিযায়ী শ্রমিককে ‘বাংলাদেশি’ বলে চিহ্নিত করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় পুলিশ। আবার অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে অনেক ক্ষেত্রেই মোটা টাকা ঘুষ দিয়ে ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে। গত ৩০ জুন বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশার বালেশ্বরে বীরভূমের ১৯ জন পরিযায়ী শ্রমিককে আটকে রাখা হয়। তাঁদের অবশ‌্য পড়ে ছাড়া হয়েছে। দিল্লির ঘটনার পর আতঙ্ক শ্রমিক মহল্লায়।

রাজ্যসভার সাংসদ তথা পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, “বাংলা বিদ্বেষ থেকেই বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলো এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। ইতিমধ্যেই চারটি মামলা হাইকোর্টে রুজু করেছি। আগামী দিনে সুপ্রিম কোর্টে যাব। সংসদে এই বিষয়টি তুলব। ভারতবর্ষের সমস্ত গণতান্ত্রিক ও মানবিক মানুষের কাছে আবেদন করব, বাংলার নাগরিকদের সম্মান রক্ষায় পথে নামুন।” পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সভাপতি মোহাম্মদ রিপন বলেন, “বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের উপর এই অমানবিক আচরণ অসাংবিধানিক। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি সংবিধান লঙ্ঘন করে যেভাবে নাগরিকদের ‘পুশব্যাক’ করছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা পথে নামছি, আন্দোলন শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করা হবে। মিছিল হবে।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement