Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2025

১০৯ বছর আগে শুরু হয়েছিল জনজাতিদের এই পুজো! আজও রক্ততিলকে দেওয়া হয় অঞ্জলি

ভুটান লাগোয়া বি-বাড়ি গ্রামের এই পুজো শুরু হওয়ার পিছনে আছে এক ইতিহাস।

109 years old durga puja doors started to be free from life threatning desease
Published by: Kousik Sinha
  • Posted:September 21, 2025 1:42 pm
  • Updated:September 21, 2025 1:48 pm   

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: পুজো নিয়ে বাংলায় রয়েছে একাধিক রীতি-নীতি! একাধিক নিয়মের কথা মাথায় রেখে উমার আরাধনা হয়ে থাকে। যেমনটা হয় ডুয়ার্সের মালপাহাড়িতে। এই এলাকায় বসবাসকারী জনজাতির মানুষ মারণ রোগ এবং বিষধর সাপের দৌরাত্ম্য থেকে জীবন রক্ষার আর্তি জানাতে দেবী উমার আরাধনা করেন। মহানবমীতে দেবীকে জোড়া মাগুর মাছ উৎসর্গ করে কপালে রক্ততিলক কেটে অঞ্জলি দেন তাঁরা।

Advertisement

ব্রিটিশ আমল থেকে এমনই অভিনব পুজোর আয়োজন চলছে ভুটান লাগোয়া কালচিনি ব্লকের বি-বাড়ি গ্রামে। শতবর্ষ অতিক্রান্ত ওই পুজোর রীতি ঘিরে লোকসংস্কৃতি গবেষক মহলে উচ্ছ্বাসের পারদ ক্রমশ চড়ছে। অনেকেই সেখানে পুজোর দিনে উপস্থিত থাকবেন।

বি-বাড়ির বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের পুজোর নেপথ্যে রয়েছে মহামারী। আতঙ্কে পালিয়ে যাওয়া শ্রমিকদের মনে সাহস জুগিয়ে ফিরিয়ে আনতে ১৯১৬ সালে এই পুজোর সূত্রপাত করেন কুলি সর্দার। চা বাগানের ব্রিটিশ ম্যানেজারের আর্থিক সাহায্যে এ পুজো শুরু হয়। প্রবীণদের মুখে শোনা যায়, শুরুতে মহানবমীর দিন সমাজের মঙ্গল কামনায় দেবীর সামনে জোড়া মাগুর মাছ বলি দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রথা আজও অমলিন।

বি-বাড়ি গ্রামের পাশে তোর্সা চা বাগান। সামনে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো ভুটান পাহাড়। চা বাগানের পাশে দলসিংপাড়া। এলাকার জনসংখ্যা খুব বেশি হলে দশ হাজার হবে। ডুয়ার্সে একমাত্র এই এলকায় বেশি মালপাহাড়ি জনজাতির বসবাস। এছাড়াও রয়েছে খেরিয়া, মুন্ডা জনজাতির মানুষ। কিছু আছেন নেপালি ও বাংলাভাষী। এলাকার ছোট্ট বাজারের পাশে বট গাছতলায় মণ্ডপ। সেখানেই পুজো আয়োজনে ব্যস্ত প্রত্যেকে।

প্রবীণ লোকসংস্কৃতি গবেষক, আলিপুরদুয়ার শহরের বাসিন্দা প্রমোদ নাথ বলেন, “বি-বাড়ি এলাকার পুজো খুবই পুরনো। শুধু তাই নয়। বড় ঘটনার সাক্ষী।” কী সেই ঘটনা? বি-বাড়ির বাসিন্দা ভূদেব মাহালি জানান, ”ব্রিটিশ শাসনকালে এক অক্টোবরে এলাকায় গুটিবসন্ত সংক্রমণে মহামারী দেখা দেয়। প্রচুর শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আতঙ্কে অনেকে পালিয়ে যায়। উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে দিশাহারা ছিলেন তোর্সা চা বাগানের ম্যানেজার টমসন। চা বাগানের কাজ বন্ধের মুখে দাঁড়িয়ে ছিল।” এই অবস্থায় কীভাবে চলবে বাগান? যা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন সবাই।

ভূদেববাবুর কথায়, ”ম্যানেজার প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসক আনার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু শ্রমিকদের আটকানো সম্ভব হয়নি। এরপরই তিনি দেবী উমার আরাধনা আয়োজনে তৎপর হন। টমসন বিশ্বনাথ সিং নামে এক কুলি সর্দারকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ১০১ টাকা আর্থিক সাহায্য করেছিলেন।”

প্রবীণ শ্রমিক শুকড়া মুন্ডা জানান, তিনি তাঁর বাবার মুখে শুনেছেন সাহেব টাকা দিলেও দেবী প্রতিমা কোথায় মিলবে সেটা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। অবশেষে সাঁওতাল পরগনার দুমকা থেকে গৌর ও রাবিয়া নামে দু’জন মৃৎশিল্পী আনা হয়। ওরা প্রতিমা গড়েন।” কিন্তু প্রতিপদে ছিল বাধা! শুকড়া মুন্ডার কথায়, ”প্রতিমা তৈরি হলেও মরকে বিপন্ন বি-বাড়িতে কোনও পুরোহিত এসে পুজো করতে রাজি হয়নি। নিরুপায় হয়ে পুজোর দায়িত্ব নেন কুলি সর্দার বিশ্বনাথ সিং নিজে। তিনিই মাগুরমাছ বলির প্রথা চালু করেন।”

এরপর ১০৯ বছর অতিক্রান্ত। নেই গুটিবসন্তের মড়ক। কিন্তু সেদিনের রীতি আজও অমলিন। আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের মেন্টর মৃদুল গোস্বামী বলেন, “বি-বাড়ির পুজোর সঙ্গে অনেক পুরনো ইতিহাস জড়িয়ে আছে। আদিবাসী সমাজে এতো পুরনো পুজো আর নেই। পর্যটকরা এখানকার আয়োজন দেখে, মিথ শুনে আনন্দ পাবেন।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ